bn বাংলা
বাংলা বাংলা
English English
عربي عربي


+8801575-547999
সকাল ৯টা হতে রাত ১০টা
Community Welfare Initiative

হয়ো না তুমি রমাদ্বানের আবেদ

আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের বন্ধু। আমরা সবাই তাঁর প্রিয় বান্দা হতে চাই। কিন্তু কীভাবে? ক্ষণিকের তরে ইবাদত করলে কীভাবে তুমি আল্লাহর প্রিয় হবে? মাহে রমাদ্বান ইবাদতের মৌসুম বটে, কিন্তু তার মানে কী রমাদ্বান চলে যাওয়ার সাথে সাথে ইবাদত ফুরিয়ে যাবে? দীর্ঘ এক মাস যাবত যে সকল আমলের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করেছে, তা সারা বছরই বাকী থাকে। এমনকি যতদিন জীবিত থাকে ততদিনই অবশিষ্ট থাকে। প্রকৃত মুমিন মৃত্যু পর্যন্ত আমল করতে থাকে।

জনৈক বুযুর্গকে বলা হলো অনেক মানুষকে শুধুমাত্র রমজানে ইবাদত করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, সে জাতি বড়ই হতভাগ্য, যারা কেবলমাত্র রমজানেই আল্লাহর হক সম্পর্কে সচেতন থাকে। যে ব্যক্তি সারা বছর ঠিকমত ইবাদত করে সে-ই প্রকৃত সফল নেককার।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَٱعۡبُدۡ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأۡتِيَكَ ٱلۡيَقِينُ ٩٩﴾ [الحجر: ٩٩] 

“আর আপনার মৃত্যু আসা পর্যন্ত আপনি আপনার রবের ইবাদত করুন।” [সূরা আল-হিজর: ৯৯]

ইমাম ইবন রজব রাহিমাহুল্লাহ বলেন, মাস, বছর, দিন-রাত, মৃত্যু ও আমলের সময় নির্ধারক। আস্তে আস্তে এগুলো নিঃশেষ হয়ে যাবে। কিন্তু যে সত্তা এগুলোর অস্তিত্ব দান করেছেন তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী। তিনি সর্বযুগে সব সময় একক ও অদ্বিতীয়। বান্দার ইবাদত সম্পর্কে সর্বদা তিনি সচেতন। প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে বান্দা আল্লাহ তা‘আলার কোনো না কোনো নিয়ামতে ডুবে থাকে। মুমিন বান্দার জীবনে এমন কোনো মুহূর্ত অতিবাহিত হয় না, যে সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে অর্পিত কোনো না কোনো দায়িত্ব না থাকে। খাঁটি মুমিন সর্বদা আশা ও ভয়ের মাঝে আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করে তার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। আমলের ক্ষেত্রে আল্লাহ প্রেমিক কখনও বিরক্তবোধ করে না। তাছাড়া রবের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য ব্যতীত বান্দার চাওয়া পাওয়ার আর কিইবা থাকতে পারে?

আল্লাহর আনুগত্য ব্যতীত যে সময়টুকু অতিবাহিত হয়েছে তা বিফল। তাঁর যিকির থেকে বিমুখ থাকার সময়টুকু আক্ষেপ ও অনুশোচনার কারণ। শত আফসোস ঐ সময়ের ওপর, যা আল্লাহর আনুগত্যের বাইরে নষ্ট হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো আমল শুরু করলে, তা রীতিমত করার চেষ্টা করতেন। আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদ্বান ও অন্যান্য মাসে রাত্রিকালীন সালাত এগারো রাকাতের বেশি পড়তেন না। অতএব বুঝা গেল, তিনি অন্যান্য মাসেও কিয়ামুল লাইল তথা তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতেন।

মাহে রমাদ্বানে কোনো আমল বা অজিফা ছুটে গেলে তা শাওয়ালে কাজা করে নিতেন। একবার তিনি রমাদ্বানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করতে পারেননি। পরে তা শাওয়াল মাসের প্রথম দশ দিনে আদায় করে নিয়েছেন।

বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ মুসলিমে আবু আইয়ুব আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি রমাদ্বান মাসের সিয়াম পালনের পর শাওয়াল মাসে ৬টি সিয়াম রাখবে, সে যেন সারা বছরই সিয়াম রাখল।

মাহে রমাদ্বানের পর সিয়াম রাখার তাৎপর্য

আল্লামা ইবন রজব রাহিমাহুল্লাহ বলেন, শাওয়াল মাসে সিয়াম রাখার তাৎপর্য অনেক। রমাদ্বানের পর সিয়াম রাখা রমাদ্বানের সিয়াম কবুল হওয়ার আলামত স্বরূপ। কেননা আল্লাহ তা‘আলা কোনো বান্দার আমল কবুল করলে তাকে পরেও অনুরূপ আমল করার তৌফিক দিয়ে থাকেন। নেক আমলের প্রতিদান বিভিন্নরূপ। তার মধ্যে একটি হলো পুনরায় নেক আমল করার সৌভাগ্য অর্জন করা। তাই সালাত, সিয়াম ও অন্যান্য ইবাদত বাকি এগারো মাসেও চালু রাখা চাই। কেননা যিনি রমাদ্বানের রব, বাকি এগারো মাসের রব তিনিই।

তিনি আরো বলেন, তবে ইবাদতের মোকাবেলায় গুনাহের কাজ করলে নিয়ামতের অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ পায়। অতএব, কোনো ব্যক্তি রমাদ্বানের পরপরই হারাম ও গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়ে গেলে তার সিয়াম স্বীয় মুখের উপর নিক্ষেপ করা হয় এবং রহমতের দরজা তার জন্য বন্ধ হয়ে যায়।

গুনাহের পর ভালো কাজ করা কতইনা উৎকৃষ্ট আমল। কিন্তু তার চেয়ে আরো উৎকৃষ্ট আমল হলো নেক কাজের পর আরেকটি নেক কাজে মশগুল হওয়া। অতএব, আল্লাহর নিকট প্রার্থনা কর, যাতে তিনি মৃত্যু পর্যন্ত হকের ওপর অটল থাকার তৌফিক দান করেন। সাথে সাথে অন্তর বিপথে যাওয়া থেকে পরিত্রাণ চাও। কেননা আনুগত্যের সম্মানের পর নাফরমানির বেইজ্জতি কতইনা নিকৃষ্ট।

হে তওবাকারী যুবসমাজ!
গুনাহ একবার ছেড়ে দিয়ে আবার সেদিকে ফিরে যেও না। যদি তোমরা ভাল কাজের উপর ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পার, তাহলে প্রবৃত্তির অস্থায়ী আনন্দের পরিবর্তে স্থায়ী ঈমানি স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে। কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে কোনো পার্থিব স্বার্থ পরিত্যাগ করবে আল্লাহ তা‘আলা বিনিময়ে তাকে তার চেয়েও উত্তম বস্তুর দ্বারা পুরস্কৃত করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِن يَعۡلَمِ ٱللَّهُ فِي قُلُوبِكُمۡ خَيۡرٗا يُؤۡتِكُمۡ خَيۡرٗا مِّمَّآ أُخِذَ مِنكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ﴾ [الانفال: ٧٠] 

“আল্লাহ যদি তোমাদের হৃদয়ে ভালো কিছু দেখেন তবে তোমাদের কাছ থেকে যা নেওয়া হয়েছে তা থেকে উত্তম কিছু তিনি তোমাদেরকে দান করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আল-আনফাল: ৭০]

হে অন্তর পরিবর্তনকারী রব, আপনি আমাদের আত্মাসমূহ আপনার মনোনীত দীনের ওপর অটল রাখুন। আমীন।

সমাপ্ত

মূল: মুহাম্মাদ আল-হামুদ আন-নজদি
অনুবাদ: চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ
সম্পাদনা: প্রফেসর ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

Share on