মীলাদুন্নবী ও জন্ম দিনের সিয়াম পালন করা
প্রশ্ন: মীলাদুন্নবীর দিন সিয়াম পালন করা কি বৈধ, যেমন সহীহ মুসলিম, নাসাঈ ও সুনান আবু দাউদে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোমবার দিনের সিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি বলেন: এ দিন আমার জন্ম হয়েছে…এ হাদীসের ভিত্তিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণে কোনো ব্যক্তির নিজের জন্মদিনে সিয়াম পালন করা কি বৈধ? আশা করছি বিষয়টি স্পষ্ট করবেন।
উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ
প্রথমত: তিরমিযীতে ইমাম মুসলিম আবু কাতাদা আল-আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোমবার দিনের সিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি বলেন,
«ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ، وَيَوْمٌ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلَيَّ فِيهِ»
“এ দিন আমার জন্ম হয়েছে এবং এ দিনেই আমার ওপর অহী নাযিল করা হয়েছে।”[1]
ইমাম তিরমিযী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«تُعْرَضُ الأَعْمَالُ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَالخَمِيسِ، فَأُحِبُّ أَنْ يُعْرَضَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ»
“সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমল পেশ করা হয়, আমি চাই সিয়াম অবস্থায় আমার আমল পেশ করা হোক।”[2]
উপরের বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্মের শোকর আদায় কল্পে সোমবার দিন সিয়াম পালন করেছেন। আবার এ দিনের ফযীলতের কারণেও তিনি সিয়াম পালন করেছেন। যেমন, এ দিনেই তার ওপর অহী নাযিল করা হয়েছে এবং দিনেই বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়, তাই তিনি পছন্দ করেন, তার আমল সিয়াম অবস্থায় পেশ করা হোক। অতএব, সোমবার দিন সিয়াম পালন করার কয়েকটি কারণের একটি কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিন হওয়া।
এ হিসেবে কেউ যদি সোমবার দিন সিয়াম পালন করে, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম পালন করেছেন, এতে আল্লাহর মাগফিরাত কামনা করে, আল্লাহর নি‘আমতের শোকর আদায় ইচ্ছা করে, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম ও নবুওয়াতের নি‘আমত এবং সে এ দিনে মাগফিরাত প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আশা করে, তাহলে ভাল, এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতও বটে। কিন্তু এর জন্য এ সপ্তাহ নয় অমুক সপ্তাহ, এ মাস নয় অমুক মাস নির্দিষ্ট করা যাবে না; বরং জীবনের প্রতি সোমবারেই সাধ্যমত সিয়াম পালন করার চেষ্টা করা।
তবে মীলাদুন্নবী উপলক্ষে বছরের শুধু একটি দিন সিয়ামের জন্য নির্দিষ্ট করা বিদ‘আত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত বিরোধী। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবার দিন সিয়াম পালন করেছেন। হাদীসে এ দিনটিই নির্দিষ্ট, আর এ দিনটি বছরের প্রতি সপ্তাহে বিদ্যমান।
দ্বিতীয়ত: বর্তমান মানুষেরা যে ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করছে ও তার জন্য মাহফিলের আয়োজন করছে, এসব বিদ‘আত ও নাজায়েয। মুসলিমদের আনন্দ-উৎসবের জন্য ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা ব্যতীত অন্য কোনো ঈদ নেই।
এরপরও কোথায় নবীর জন্ম, যা প্রকৃতপক্ষেই নি‘আমত, সকল মানব জাতির জন্য রহমত। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ إِلَّا رَحۡمَةٗ لِّلۡعَٰلَمِينَ ١٠٧﴾ [الانبياء: ١٠٧]
“আর আমি তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি।”[3] আর কোথায় অন্যান্য লোকের জন্ম ও মৃত্যু!? কোথায় ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম?! কোথায় ছিলেন তাদের পরবর্তী নেককার লোকেরা?! এই আমল থেকে তারা কেন দুরে ছিলেন?! যদি নিজের জন্ম দিনের শোকর আদায় উপলক্ষে সিয়াম পালন করা বৈধ হতো, তাহলে অবশ্যই তারা তা পালন করতেন।
তাদের কারো থেকে প্রমাণিত নেই যে, সপ্তাহের কোনো একদিন অথবা মাসের কোনো একদিন অথবা বছরের কোন একদিন অথবা নির্দিষ্ট কোনো এক দিনকে তারা নিজের জন্ম দিন উপলক্ষে ঈদ পালন করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত যদি অন্য কারো জন্ম দিন উপলক্ষে সিয়াম পালন করা সাওয়াবের কাজ হতো, তাহলে আমাদের পূর্বে তারাই এতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেন, যারা অন্যান্য সকল কল্যাণে আমাদের চেয়ে অগ্রগামী ছিলেন। তারা যেহেতু তা করেন নি, এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে, এসব আমল বিদ‘আত, এর ওপর আমল করা বৈধ নয়। আল্লাহ ভালো জানেন।
সমাপ্ত
সূত্র : موقع الإسلام سؤال وجواب
শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
অনুবাদ: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা: প্রফেসর ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
[1] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬২।
[2] তিরমিযী, হাদীস নং ৭৪৭। ইমাম তিরমিযী হাদীসটি হাসান বলেছেন। আলবানী সহীহ তিরমিযীতে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[3] সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭।