পিতা জীবিতকালীন নির্মিত ঘরে কি উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে?
প্রশ্ন: আমার পিতা তিন ছেলে ও চার মেয়ে রেখে মারা গেছেন। আমার পিতা শুরুতে গরিব ছিলেন, কিন্তু আমরা যখন বড় হই, আল্লাহ আমাদের প্রচুর ধন-সম্পদ দান করেন। এমন জায়গা থেকে তিনি আমাদের রিযিক দান করেছেন, যার কল্পনা আমাদের অন্তরে ছিল না। আল-হামদুলিল্লাহ। আমাদের একটি পুরনো বাড়ি ছিল, আমি তা ভেঙে পুনরায় নির্মাণ করি। আমার পিতা তখন অসুস্থ, শয্যাশায়ী। নির্মাণের যাবতীয় খরচ বহন করি আমি ও আমার ভাইয়েরা। আল-হামদুলিল্লাহ। আমাদের পিতা আমাদের জন্য শুধু এ বাড়িটা রেখেই মারা যান, যা আমি নির্মাণ করেছি। এখন এ বাড়িটা তিন তলাবিশিষ্ট, আগে ছিল শুধু ইটের। এটা কি ঠিক হবে যে, আমি বোনদের শুধু জমিনের অংশীদারিত্ব দিব, যার মূল্য ৫০ হাজার জুনাইহ। কারণ, আমিই এ ঘর তিন তলা পর্যন্ত নির্মাণ করেছি। আমার পিতা তখন অসুস্থ ছিলেন। তিনি আমাদের সাথে অংশ গ্রহণ করেননি, নাকি বোনদের পুরো ঘরের অংশিদারিত্ব দেওয়া ওয়াজিব, যা তিন তলা বিশিষ্ট এবং যার মূল্য ১৯০ হাজার জুনাইহ? আশা করি, আমাদেরকে উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন। কারণ, আমি এমন কোনো কাজ করতে চাই না, যার কারণে আমার পিতা কবরে চিন্তিত থাকবেন।
উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ
আপনি যা নির্মাণ করেছেন, তার দুইটি সম্ভাবনা রয়েছে:
এক. আপনি যা নির্মাণ করেছেন, তা হেবা-দান এবং পিতা ও ভাই-বোনদের ওপর অনুগ্রহ হিসেবে করেছেন। এমতাবস্থায় তা আপনার পিতার সম্পদের সাথে যুক্ত হবে এবং তার মৃত্যুর পর সকল ওয়ারিসদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। আপনার অতিরিক্ত কোনো দাবি থাকবে না।
দুই. আপনি নির্মাণ করার সময় দান করার নিয়ত করেননি; বরং যা খরচ করেছেন, তা আপনার পিতা ও ভাই-বোনদের থেকে ফেরৎ নেওয়ার নিয়তে খরচ করেছেন। অর্থাৎ নির্মাণ ব্যয়। তবে আপনি এখন তাদের থেকে নির্মাণ খরচ গ্রহণ করতে পারেন, অতঃপর সকল ওয়ারিসদের মধ্যে বাড়ি বণ্টন করে দেবেন।
কাযী শুরাইহ বলেছেন: যে ব্যক্তি অনুমতি নিয়ে অপরের জায়গায় বাড়ি নির্মাণ করল, তার জন্য বাড়ির মূল্য গ্রহণ করার অধিকার রয়েছে।[1]
ইলমী গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির আলেমদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: আমার পিতা রয়েছে, যার বয়স প্রায় পঁচাত্তর বছর। এখনো তিনি জীবিত। মাটির তৈরি তার একটি পুরনো বাড়ি রয়েছে, যার পজিশন খুব সুন্দর। আমি তা ভেঙে আমার খরচে নতুন করে নির্মাণ করি….
তার উত্তরে বলা হয়েছে: আপনার পিতার বাড়িতে আপনি যে খরচ করার কথা বলেছেন, তা যদি আপনি নির্মাণের সময় সদকার নিয়তে করে থাকেন, তবে আল্লাহ আপনাকে প্রতিদান দিবেন। কিন্তু এখন আপনি আপনার পিতা থেকে তার নির্মাণ খরচ নিতে পারবেন না। আর যদি ফেরৎ নেওয়ার নিয়তে খরচ করে থাকেন, তবে এখন আপনার তা ফেরৎ নেওয়ার অধিকার রয়েছে।[2]
মোদ্দাকথা: বিষয়টি নির্মাণের সময় আপনার নিয়তের ওপর নির্ভর করে। আর আপনিই আপনার নিয়ত সম্পর্কে ভালো জানেন। তবে জেনে রাখুন, কোনো মানুষের জন্য হেবা করে তা ফেরৎ নেওয়া বৈধ নয়।
দলীল: ইবন উমার ও ইবন আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لَا يَحِلُّ لِرَجُلٍ أَنْ يُعْطِيَ عَطِيَّةً أَوْ يَهَبَ هِبَةً فَيَرْجِعَ فِيهَا إِلَّا الْوَالِدَ فِيمَا يُعْطِي وَلَدَهُ وَمَثَلُ الَّذِي يُعْطِي الْعَطِيَّةَ ثُمَّ يَرْجِعُ فِيهَا كَمَثَلِ الْكَلْبِ يَأْكُلُ فَإِذَا شَبِعَ قَاءَ ثُمَّ عَادَ فِي قَيْئِهِ».
“কোনো কিছু দান করে অথবা হেবা করে কারো জন্যই তা ফেরৎ নেওয়া বৈধ নয়। তবে পিতা তার সন্তানকে দেওয়া হেবা ফেরৎ নিতে পারে। আর যে দান করে ফেরৎ নেয়, তার উদাহরণ কুকুরের ন্যায়। কুকুর ভক্ষণ করে, অতঃপর যখন পেট ভরে যায় বমি করে ফেলে দেয়, অতঃপর তা পুনরায় ভক্ষণ করে।”[3]
আর আপনি যে বলেছেন, ‘আমি এমন কোনো কাজ করতে চাই না, যার কারণে আমার পিতা কবরে চিন্তিত থাকবে’। এ ব্যাপারে মাসআলা হচ্ছে, পরিবারের কর্মকাণ্ড মৃত ব্যক্তিদের জানা না জানার বিষয়টি গায়েব তথা অদৃশ্য সংবাদের অন্তর্ভুক্ত, যা দলীল ছাড়া প্রমাণিত হয় না।
শাইখ ইবন বায রাহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: মৃত ব্যক্তিরা কি তাদের জীবিত আত্মীয় স্বজনের আমল সম্পর্কে জানে?
তিনি উত্তর দেন: এর সপক্ষে শরী‘আতের প্রমাণ আছে বলে আমার জানা নেই।[4]
বরং মানুষের উচিৎ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইবাদত করা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকা।
আল্লাহ ভালো জানেন।
সূত্র: موقع الإسلام سؤال وجواب
অনুবাদ: সানাউল্লাহ নযির আহমদ
সম্পাদনা: প্রফেসর ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
[1] মুসান্নাফে ইবন আবি শাইবাহ (৪/৪৯৪; সুনানিল কুবরা লিল বায়হাকী (৬/৯১)।
[2] ফাতাওয়া লাজনায়ে দায়েমা (১৬/২০৫)।
[3] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৫৩৯; নাসাঈ, হাদীস নং ৩৬৯০; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৩৭৭। আলবানী সহীহ আবু দাউদে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[4] শাইখ ইবন বাযের ফাতাওয়া সমগ্র (১৩/১৭০)।