bn বাংলা
বাংলা বাংলা
English English
عربي عربي


+8801575-547999
সকাল ৯টা হতে রাত ১০টা
Community Welfare Initiative

কালেমা শাহাদাত (পর্ব ২)

৮. আল্লাহ ব্যতীত সকল উপাস্যদের অস্বীকার করা:

বান্দার উচিৎ আল্লাহ তাআলা ব্যতীত ধারণা প্রসূত সকল উপাস্য-মা‘বূদ অস্বীকার করা। সাথে সাথে এ বিশ্বাস সুদৃঢ় করা যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই। আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত করা হচ্ছে সব অসার। যে কেউ এ সমস্ত কাজ করে সে আল্লাহর ওপর অপবাদ আরোপ করে, হোক না সে উপাস্য (মা‘বুদ) নৈকট্যপ্রাপ্ত ফিরিশতা, প্রেরিত রাসূল, নেককার ওলী, পাথর, গাছ, চন্দ্র, দল, গোষ্টি-জ্ঞাতি অথবা কোনো সংবিধান…ইত্যাদি। আল্লাহ বলেন,

﴿فَمَن يَكۡفُرۡ بِٱلطَّٰغُوتِ وَيُؤۡمِنۢ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰ لَا ٱنفِصَامَ لَهَاۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ﴾ [البقرة: ٢٥٦]

“যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে সে ধারণ করে এমন সুদৃঢ় হাতল যা ভঙ্গ হবার নয়। আর আল্লাহ সবই শুনেন এবং সবই জানেন।” [সূরা আল-বাকারাহ: ২৫৬]

﴿وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَ﴾ [النحل: ٣٦]

“আর আমরা প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে বর্জন কর।” [সূরা আন নাহল, আয়াত: ৩৬]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«من قال لاإله إلاالله وكفر بما يعبد من دون الله حرم ماله ودمه، وحسابه على الله عز وجل».

“যে কেউ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে এবং আল্লাহ ছাড়া সকল উপাস্যকে অস্বীকার করেছে তার সম্পদ ও জীবন হারাম হয়ে গেছে এবং তার হিসাব আল্লাহর ওপর ন্যস্ত।”

হে মুসলিম ভাই! তুমি ভালো করে জেনে নাও, জান্নাতের সৌভাগ্য লাভ করা, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া এ কালেমার ওপর অটল, অবিরাম অবিচল থেকে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করা ব্যতীত সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٠٢ ﴾ [ال عمران: ١٠٢] 

“হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর যথাযথ তাকওয়া অবলম্বন করা এবং অবশ্যই মুসলিম না হয়ে মারা যেও না।” [সূরা আলে ইমরান: ১০২]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«من مات لايشرك بالله شيئا دخل الجنة».

“আল্লাহ তা‘আলার সাথে শির্ক না করে যে ব্যক্তি মারা গেল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”

অন্যত্র বলেন,

«ما من عبد قال لاإله إلا الله ثم مات على ذلك إلا دخل الجنة».

“যে কোনো ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে অতঃপর এর ওপর স্থির থেকে মারা গিয়েছে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।”

পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এই কালেমা ভিন্ন অন্য কোনো নীতির ওপর স্থির থেকে আল্লাহর সমীপে উপস্থিত হবে এবং শির্ক করা অবস্থায় মারা যাবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আল্লাহ বলেন,

﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ﴾ [النساء: ٤٨]

“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না যে লোক তার সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করবেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন।” [সূরা আন-নিসা: ৪৮]

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,

﴿إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ﴾ [المائ‍دة: ٧٢]

“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশিদার স্থির করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। আর অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই।” [সূরা আল-মায়েদা: ৭২]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«من لقي الله لايشرك به شيئا دخل الجنة، ومن لقيه يشرك به شيئا دخل النار».

“যে শির্কমুক্ত অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার সাথে সাক্ষাত করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি শির্কে জড়িত হয়ে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”

‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর সাক্ষ্য প্রদানের অর্থ :

‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর সাক্ষ্য প্রদানের অর্থ: মৌখিকভাবে স্বীকৃতির সাথে সাথে অন্তরে অবিচল, অটল ও অগাধ বিশ্বাস রাখা যে, তাদের নিকট আল্লাহর রিসালত বা বাণী পৌঁছানোর জন্য মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহ দায়িত্বপ্রাপ্ত রাসূল। আল্লাহ বলেন,

﴿قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُمۡ جَمِيعًا﴾ [الاعراف: ١٥٨]

“বলে দিন, হে সকল মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের প্রতি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল।” [সূরা আল-আ‘রাফ: ১৫৮]

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,

﴿مُّحَمَّدٞ رَّسُولُ ٱللَّهِۚ﴾ [الفتح: ٢٩]

“মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।” [সূরা আল-ফাতহ: ২৯]

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,

﴿ تَبَارَكَ ٱلَّذِي نَزَّلَ ٱلۡفُرۡقَانَ عَلَىٰ عَبۡدِهِۦ لِيَكُونَ لِلۡعَٰلَمِينَ نَذِيرًا ١ ﴾ [الفرقان: ١] 

“কতই না বরকতময় তিনি, যিনি তার বান্দার প্রতি ফুরক্বান (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন। যাতে তিনি সৃষ্টিকুলের সকলের জন্যে সতর্ককারী হন।” [সূরা আল-ফুরকান: ১]

‘আল্লাহ তা‘আলা তাকে শির্কসহ সমস্ত অপছন্দ-পরিত্যাজ্য কার্যকলাপ থেকে ভীতি প্রর্দশনকারী, নির্ভেজাল তাওহীদসহ সমস্ত পছন্দনীয়-গ্রহণীয় কার্যকলাপের দিকে আহ্বানকারীরূপে প্রেরণ করেছেন।’ আল্লাহ বলেন,

﴿قُمۡ فَأَنذِرۡ ٢ وَرَبَّكَ فَكَبِّرۡ ٣ ﴾ [المدثر: ٢،  ٣]

“উঠুন সতর্ক করুন, আপন রবের মহত্ব ঘোষণা করুন।” [সূরা আল-মুদ্দাসসির: ২-৩]

অর্থাৎ তাদেরকে শির্ক থেকে এবং মূর্তিপূজা থেকে ও আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ সকল জিনিস থেকে ভীতিপ্রর্দশন করুন। তাওহীদ ও আল্লাহর অনুমোদিত বিধান মতে তাঁর বড়ত্ব বর্ণনা করুন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّآ أَرۡسَلۡنَٰكَ بِٱلۡحَقِّ بَشِيرٗا وَنَذِيرٗاۚ﴾ [فاطر: ٢٤]

“আমরা আপনাকে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে।” [সূরা ফাতির: ২৪]

অর্থাৎ আমি তাকে তওহীদ, আনুগত্য ও অধিক সাওয়াবের সুসংবাদদানকারী হিসেবে প্রেরণ করেছি, সাথে সাথে শির্ক, গুনাহ ও কঠিন শাস্তির ভীতি প্রদর্শকও করেছি। অধিকন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাকে শুধু পৌঁছিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং এখানেই যথেষ্ট করতে বলেছেন। এর পর কে মানলো আর কে মানলো না এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করা হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَۖ وَإِن لَّمۡ تَفۡعَلۡ فَمَا بَلَّغۡتَ رِسَالَتَهُۥۚ﴾ [المائ‍دة: ٦٧]

“হে রাসূল, পৌঁছে দিন আপনার রবের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম পৌঁছালেন না।” [সূরা আল-মায়েদা: ৬৭]

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿مَّا عَلَى ٱلرَّسُولِ إِلَّا ٱلۡبَلَٰغُۗ﴾ [المائ‍دة: ٩٩]

“রাসূলের দায়িত্ব শুধু পৌঁছে দেওয়া।” [সূরা আল-মায়েদা: ৯৯]

তিনি আমৃত্যু তার ওপর প্রেরিত অহী সংযোজন-বিয়োজন ব্যতীত হুবহু আমাদের পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন। যা আদিষ্ট হয়েছেন তা পঙ্খানুপুঙ্খ আদায় করেছেন। উম্মতের কল্যাণ কামনার সর্বশেষ উদাহরণটুকু পেশ করেছেন। এ জন্য আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেছেন:

«من حدثك أن محمدا صلى الله عليه وسلم كتم شيئا مما أنزل الله فقد كذب. ولوكان كاتما شيئا لكتم عبس وتولى. ليس لك من الأمر شيء».

“যদি কেউ তোমাকে বলে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ যা ওহী হিসেবে নাযিল করেছেন তার কিয়দংশ গোপন করেছেন, সে মিথ্যুক। কারণ, যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো জিনিস গোপন করতেন, তাহলে অবশ্যই অত্র আয়াত দু’টি গোপন করতেন:

(১) ﴿عَبَسَ وَتَوَلَّى  “তিনি ভ্রু-কুঞ্চিত করলেন এবং মুখ ফিরিয়ে নিলেন।” [সূরা আবাসা: ১]

(২) ﴿لَيْسَ لَكَ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ  “এ ব্যাপারে আপনার কোনো করণীয় নেই।” [সূরা আলে ইমরান: ১২৮]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে যা পৌঁছিয়েছেন তাই সর্ম্পূণ দীন। কোনো ধরনের কমতি রাখেন নি, যেখানে সংযোজন প্রয়োজন হবে। কোনো ধরনের জটিলতা রাখেন নি, যা দূরীভূত করতে হবে। আবার এমন সংক্ষিপ্ত করেন নি, যেখানে ব্যাখ্যার প্রয়োজন হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ﴾ [المائ‍دة: ٣]

“আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের  জন্যে দীন হিসেবে মনোনীত করলাম।” [সূরা আল-মায়েদা: ৩] অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَنَزَّلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ تِبۡيَٰنٗا لِّكُلِّ شَيۡءٖ﴾ [النحل: ٨٩]

“আর আমরা আপনার প্রতি নাযিল করেছি এমন কিতাব যাতে রয়েছে প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা।” [সূরা আন-নাহল: ৮৯]

অতএব, কোনো ব্যক্তির এতে সংযোজন বিয়োজন বা পরিবর্তনের সুযোগ নেই। এ ঘোষণা শুনার পর যদি কেউ তাতে কোনো রকম পরিবর্তন করে, তবে পরিবর্তনকারীর ওপর এর পাপ বর্তাবে। আল্লাহ তাকে সময় মত পাকড়াও করবেন।

‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর সাক্ষ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রাসঙ্গিক শর্তসমুহ:

যে কোনো বান্দা কর্তৃক ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এ সাক্ষ্য প্রদান করার ফলে কয়েকটি জিনিস অত্যাবশ্যকীয় হয়ে যায়। তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো:

১. ইহকাল ও পরকালের ব্যাপারে অতীত ও ভবিষ্যত সংক্রান্ত যে সব সংবাদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছেন সেগুলোর যথাযথ সত্যায়ণ করা, সত্য বলে মেনে নেওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿مَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ﴾ [الحشر: ٧]

“রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ কর।” [সূরা আল-হাশর: ৭]

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَإِن كَذَّبُوكَ فَقُل رَّبُّكُمۡ ذُو رَحۡمَةٖ وَٰسِعَةٖ وَلَا يُرَدُّ بَأۡسُهُۥ عَنِ ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡمُجۡرِمِينَ ١٤٧ ﴾ [الانعام: ١٤٧]

“যদি তারা আপনাকে মিথ্যাবাদী বলে, তবে বলে দিন- তোমার রব সুপ্রশস্ত করুণার মালিক আর তার শাস্তি অপরাধীদের ওপর থেকে টলবে না।” [সূরা আল-আন‘আম: ১৪৭]

২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ পালন করে ও নিষেধ থেকে বিরত থেকে যথাযথ তাঁর অনুসরণ করার প্রমাণ দেওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ عَلَيۡهِمۡ حَفِيظٗا ٨٠ ﴾ [النساء: ٨٠]

“যে লোক রসূলের হুকুম মান্য করল সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল। আর যে লোক বিমূখতা অবলম্বন করল, আমরা তো আপনাকে (হে মুহাম্মাদ) তাদের জন্য রক্ষক নিযুক্ত করে পাঠাই নি।” [সূরা আন-নিসা: ৮০]

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَإِنَّ لَهُۥ نَارَ جَهَنَّمَ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدًا [الجن: ٢٣]

“আর যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্য হয়, তার জন্যে রয়েছে জাহান্নামের অগ্নি। তথায় তারা চিরকাল থাকবে।” [সূরা আল-জিন্ন: ২৩]

৩. একমাত্র তার আনুগত্য করা, অন্য কারো পথ বা পদ্ধতির অনুসরণ না করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥ ﴾ [ال عمران: ٨٥] 

“যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম অন্বেষণ করে, কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।” [সূরা আলে ইমরান: ৮৫]

অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد».

“যে এমন আমল করল যার প্রতি আমাদের নির্দেশ নেই, তা পরিত্যক্ত, পরিত্যাজ্য ও প্রত্যাখ্যাত।”

অন্যত্র বলেন,

«كل أمتي يدخلون الجنة إلا من أبى، قالوا: ومن أبى يارسول الله ؟ قال: من أطاعني دخل الجنة ومن عصاني فقد أبى».

“আমার উম্মতের প্রত্যেকেই জান্নাতে প্রবেশ করবে, তবে প্রত্যাখ্যানকারী ব্যতীত। তারা জিজ্ঞেস করল: হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যাখ্যানকারী কে? তিনি বললেন, যে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার অবাধ্য হবে সেই তো প্রত্যাখ্যানকারী।”

৪. পরিপূর্ণরূপে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শে আদর্শবান হওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ لِّمَن كَانَ يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأٓخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا ٢١ ﴾ [الاحزاب: ٢١]

“যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” [সূরা আল-আহযাব: ২১]

এতে সন্দেহ নেই যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন ইসলামের চির জীবন্ত আদর্শ। প্রতিটি কাজে ও কর্মে তিনিই উত্তম পথিকৃত। যে তার আনুগত্য করবে সৌভাগ্যশীল হবে। যে তার আদর্শ ও নীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে পথভ্রষ্ট ও দিকভ্রান্ত হবে।

৫. সমস্ত বিরোধপূর্ণ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মীমাংসার শরণাপন্ন হওয়া, সে মীমাংসাতে সন্তুষ্ট থাকার সাথে সাথে ন্যায় ও ইনসাফের বিশ্বাস রাখা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥ ﴾ [النساء: ٦٥]

“অতএব, আপনার রবের শপথ! তারা কখনো ঈমানদার হতে পারবে না, যে পর্যন্ত তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে বিচারক বলে মেনে না নেয়। অতঃপর আপনি যে বিচার করবেন তা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণ না করে এবং এটি সন্তুষ্টচিত্তে কবুল করে।” [সূরা আন-নিসা: ৬৫]

৬. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত না হওয়া এবং অবজ্ঞা ও অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা : আল্লাহ যতটুকু সম্মান দান করেছেন, ততটুকু সম্মান তাকে প্রদান করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَآ أَحَدٖ مِّن رِّجَالِكُمۡ وَلَٰكِن رَّسُولَ ٱللَّهِ وَخَاتَمَ ٱلنَّبِيِّ‍ۧنَۗ﴾ [الاحزاب: ٤٠]

‘মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যকার কোনো পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী।” [সূরা আল-আহযাব: ৪০]

সুতরাং রাসূলের ব্যাপারে এমন কোনো বিশ্বাস পোষণ করবে না যা আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের সাথে শির্কের শামিল। যেমন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য আল্লাহর ন্যায় কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে বিশ্বাস পোষণ করা। যেমন, তিনি গায়েব জানেন, দুনিয়ার আবর্তন ও বিবর্তনের অধিকার রাখেন, উপকার ও ক্ষতি করার সামর্থ্য রাখেন, কিছু দিতে পারেন, বঞ্চিত করতে পারেন ইত্যাদি বিশ্বাস করা।

অনুরূপভাবে রাসূলের জন্য এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যা আল্লাহর উলুহিয়্যাতের সাথে শির্কের শামিল, যেমন কুরবানী, মানত, সাহায্যের আবেদন, সুপারিশ প্রার্থনা, ভরসা, ভয় ও আশা ইত্যাদির ব্যাপারে তার শরণাপন্ন হওয়া। উল্লিখিত যাবতীয় ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই নির্দিষ্ট। যে কেউ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করবে সে প্রকারান্তরে তার বিরোধিতায় ও অবাধ্যতায় লিপ্ত হলো। যেমন, তিনি বলেছেন:

«لاتطروني كما أطرت النصارى ابن مريم، فإنما أنا عبد فقولوا عبد الله ورسوله».

“তোমরা আমার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না, যেমন নাসারারা মারইয়াম তনয় ঈসার ব্যাপারে করেছে। নিঃসন্দেহে আমি আল্লাহর বান্দা। সুতরাং তোমরা আমাকে তাঁর বান্দা এবং রাসূল বলো।” যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা জানতেন যে, কতিপয় লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে। তাই তিনি উম্মতকে স্বীয় সাধ্য ও সামর্থ্যের কথা জানিয়ে দেওয়ার জন্য রাসূলকে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُل لَّآ أَقُولُ لَكُمۡ عِندِي خَزَآئِنُ ٱللَّهِ وَلَآ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ وَلَآ أَقُولُ لَكُمۡ إِنِّي مَلَكٌۖ إِنۡ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰٓ إِلَيَّۚ﴾ [الانعام: ٥٠]

“আপনি বলুন, আমি তোমাদেরকে বলি না যে আমার কাছে আল্লাহর ভাণ্ডার রয়েছে। তা ছাড়া আমি গায়েবী বিষয়ও অবগত নই। আমি এমনও বলি না যে, আমি ফিরিশতা। আমি তো শুধু ঐ অহীর অনুসরণ করি, যা আমার কাছে আসে।” [সূরাআল-আন‘আম: ৫০]

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُل لَّآ أَمۡلِكُ لِنَفۡسِي نَفۡعٗا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُۚ وَلَوۡ كُنتُ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ لَٱسۡتَكۡثَرۡتُ مِنَ ٱلۡخَيۡرِ وَمَا مَسَّنِيَ ٱلسُّوٓءُۚ إِنۡ أَنَا۠ إِلَّا نَذِيرٞ وَبَشِيرٞ لِّقَوۡمٖ يُؤۡمِنُونَ ١٨٨ ﴾ [الاعراف: ١٨٨]

“আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ বা অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান, আর আমি যদি গায়েবের কথা জানতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতাম এবং কোনো অমঙ্গল আমাকে কখনও স্পর্শ করতে পারতো না। আমি তো শুধু মাত্র ঈমানদারদের জন্য একজন ভীতিপ্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা।” [সূরা আল-আ‘রাফ: ১৮৮] অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُلۡ إِنِّي لَآ أَمۡلِكُ لَكُمۡ ضَرّٗا وَلَا رَشَدٗا ٢١ قُلۡ إِنِّي لَن يُجِيرَنِي مِنَ ٱللَّهِ أَحَدٞ وَلَنۡ أَجِدَ مِن دُونِهِۦ مُلۡتَحَدًا ٢٢ إِلَّا بَلَٰغٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِسَٰلَٰتِهِۦۚ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَإِنَّ لَهُۥ نَارَ جَهَنَّمَ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدًا ٢٣ ﴾ [الجن: ٢١،  ٢٣]

“বলুন, আমি তোমাদের ক্ষতি কিংবা কল্যাণ করার ক্ষমতা রাখি না। বলুন, আল্লাহর কবল থেকে কেউ আমাকে রক্ষা করতে পারবে না এবং তিনি ব্যতীত আমি কোনো আশ্রয়স্থল পাব না। কিন্তু আল্লাহর বাণী পৌঁছানো ও তার পয়গাম প্রচার করাই আমার কাজ। যে আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্য হবে, তার জন্যে রয়েছে জাহান্নামের অগ্নি। তথায় তারা চিরকাল থাকবে।” [সূরা আল-জিন্ন: ২১-২৩]

তদ্রুপ রাসূলকে ঐ সমস্ত বৈশিষ্ট্য থেকে মুক্ত মনে করা যাবে না, যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তাকে ভূষিত করেছেন, এটাও এক ধরনের বাড়াবাড়ি। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা তাকে সমস্ত সৃষ্টি জীবের ওপর শ্রেষ্টত্ব দান করেছেন, রিসালাতের দায়িত্ব,  সুসংবাদদান ও সতর্করণের দায়িত্ব প্রদান করেছেন, অলৌকিক ঘটনাবলীর দ্বারা স্বীয় নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণ করার ক্ষমতা প্রদান করেছেন। কতিপয় গায়েবী জ্ঞানের ইলম এবং হাওযে কাউসার প্রভৃতি দান করেছেন। সুতরাং ঈমানদারের উচিত এ সকল নি‘আমত ও পুরস্কারের প্রতি ঈমান রাখা, অতিরঞ্জন ও সীমালঙ্ঘন থেকে বিরত থাকা (যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দুনিয়া-আখিরাতে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে)।

এখানে আমরা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রদত্ত কতিপয় স্বাতন্ত্র ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করছি, যা পূর্বের কোনো নবীকে দেওয়া হয় নি। যার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং বলেছেন, তিনি বলেন,

«فضلت على الأنبياء بست : أعطيت جوامع الكلم . ونصرت بالرعب، وأحلت لي الغنائم، وجعلت لي الأرض مسجدا وطهورا، وأرسلت إلى الخلق كافة، وختم بي النبيون».

“আমাকে ছয়টি জিনিসের মাধ্যমে অন্যান্য নবীদের ওপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
১. পরিপূর্ণ অর্থবহ সংক্ষিপ্ত বাক্যবিন্নাস।
২. শত্রুপক্ষের অন্তরে আতংক।
৩. আমার জন্য গণীমতের সম্পদ বৈধ।
৪. সকল যমিন আমার জন্য মসজিদ ও পবিত্রতা অর্জন করার মাধ্যম।
৫. আমাকে সকল মানষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে এবং
৬. আমার দ্বারা নবুওয়াতের পরিসমাপ্তি ঘটানো হয়েছে।”

উম্মতের ওপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতিপয় অধিকার:

১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত অবশ্য কর্তব্য, অতীব আবশ্যক। ধন-সম্পদ, নিজের জীবন, পিতা-মাতা, সন্তান, পরিবার-পরিজন ও সমস্ত মানুষের মহব্বতের ওপর তার মহব্বতকে অগ্রাধিকার দেওয়া ঈমানী দায়িত্ব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لايؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من أهله وماله والناس أجمعين».

“ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের কেউ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি তার নিকট পরিবার-পরিজন, সম্পদ ও সমস্ত মানুষ হতে অধিক প্রিয় না হবো।”

২. তার ওপর দুরুদ ও সালাম পাঠ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَٰٓئِكَتَهُۥ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِيِّۚ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ صَلُّواْ عَلَيۡهِ وَسَلِّمُواْ تَسۡلِيمًا ٥٦ ﴾ [الاحزاب: ٥٦]

‘আল্লাহ তা‘আলা ও তার ফিরিশতাগণ নবীর ওপর সালাত পেশ করে। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর ওপর সালাত পেশ কর এবং তার প্রতি যথাযথ সালাম পেশ কর।” [সূরা আল-আহযাব: ৫৬]

৩. তার কল্যাণ কামনা করা। অর্থাৎ তাঁর সুন্নাত ও শরী‘আতের হিফাযত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা, যাতে এর ভিতর কোনো ধরনের সংযোজন-বিয়োজন, পরিবর্তন বা পরিবর্ধন না হতে পারে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«الدين النصيحة ثلاثا قلنا: لمن يارسول الله؟ قال: لله عزوجل، ولكتابه، و لرسوله، ولأئمة المسلمين، وعامتهم».

“দীন কল্যাণ কামনার নাম: তিনবার বলেছেন, আমরা প্রশ্ন করলাম: কার জন্য কল্যাণ কামনা হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন: আল্লাহর জন্য, তার কিতাবের জন্য, তার রাসূলের জন্য, মুসলিমদের ঈমামদের জন্য এবং সমস্ত মানুষের জন্য।”

৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহলে বাইত তথা-পরিবার পরিজনের ব্যাপারে তার উপদেশ যথাযথ পালন করা। আহলে বাইত অর্থাৎ হাশেম ও আব্দুল মুত্তালিবের বংশধর ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ।

মুসলিম মাত্রই তাঁর বংশধরের পবিত্রতা এবং রাসূলের সাথে নৈকট্যতার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিবে। অর্থাৎ তাদের অভাব মোচন করবে, মহব্বত করবে, তাদের সম্মান রক্ষা করবে। যেহেতু গাদিরে খুম-এর দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে বলেছেন:

«أذكركم الله في أهل بيتي».

“আমি তোমাদেরকে আমার আহলে বাইতের ব্যাপারে আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।”

৫. তাঁর সাহাবীদের মহব্বত করা এবং তাদের বিশ্বস্ততার ওপর আস্থা রাখা:
প্রত্যেক মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে মহব্বত করা। তাদের বিশ্বস্ততার ওপর আস্থা রাখা। তাদের সকলের শ্রেষ্টত্বের ঘোষণা দেওয়া। তাদের মাঝে সংঘটিত হয়ে যাওয়া বিরোধ নিয়ে সামালোচনা থেকে বিরত থাকা। তাদের নামের সাথে ‘রাদিয়াল্লাহু আনহুম’ বলা। তাদের ব্যাপারে অন্তর পরিচ্ছন্ন রাখা। তাদের কারো প্রতি বিদ্বেষ না রাখা। তাদের অপবাদ, গালি, কুৎসা রটনা ইত্যাদি থেকে নিজের মুখ নিরাপদ রাখা।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لاتسبوا أصحابي، فوالذي نفسي بيده لو أن أحدكم أنفق مثل أحد ذهبا ما بلغ مد أحدهم ولا نصيفه».

“তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালি দিও না। যার হাতে আমার জান তার শপথ করে বলছি: তোমাদের কেউ ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ দান করলেও তা তাদের এক অঞ্জলী বা তার অর্ধেক দানের সমানও হবে না।”

সমাপ্ত

 

সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা: প্রফেসর ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

Share on