bn বাংলা
বাংলা বাংলা
English English
عربي عربي


+8801575-547999
সকাল ৯টা হতে রাত ১০টা
Community Welfare Initiative

ঈদের পর করণীয়

প্রিয় পাঠক!

আমরা রমাদ্বানের সমাপ্তি নিয়ে কয়েকটি ধাপে একটু চিন্তা করি, হয়তো আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এর থেকে উপকৃত হওয়ার তাওফীক দান করবেন।

প্রথম ধাপ: আমরা রমাদ্বান থেকে কী উপার্জন করলাম?

আমরা কি রমাদ্বানের সুশোভিত দিন ও আনন্দমুখর রাতগুলোকে বিদায় জানাচ্ছি?! আমরা কি কুরআনের মাস, তাকওয়ার মাস, ধৈর্যের মাস, জিহাদ, রহমত, মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাসকে বিদায় জানাচ্ছি?!

এখানে আমাদের একটি বিষয় খুব ভালো করে জেনে রাখা প্রয়োজন যে, এগুলো শুধু রমাদ্বানের সঙ্গে খাস নয়, বরং প্রত্যেক দিন, প্রতিটি সময়ই আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত পাওয়া যেতে পারে। প্রতিটি মুহূর্তেই তাকওয়া অর্জন ও কুরআনের আদর্শে আদর্শবান হওয়া প্রয়োজন। তবে রমাদ্বান মাসে নেকির পরিমাণ খুব বৃদ্ধি করা হয়, নেকি ও ইবাদতের সংখ্যা এতে বেড়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَرَبُّكَ يَخۡلُقُ مَا يَشَآءُ وَيَخۡتَارُ﴾ [القصص: ٦٨]

“আর আপনার রব যা ইচ্ছে সৃষ্টি করেন এবং যা ইচ্ছে মনোনীত করেন।”[১]

আমরা কি তাকওয়া বাস্তবায়ন করেছি এবং মুত্তাকীর সার্টিফিকেট নিয়ে রমাদ্বানকে বিদায় জানাচ্ছি?!

আমরা কি রমাদ্বানে সব ধরনের ইবাদাতের ওপর নিজেদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি?! আমরা কি আমাদের নফস ও প্রবৃত্তির সঙ্গে জিহাদ করে তাদের উপর জয়ী হতে পেরেছি, না পূর্বের বদভ্যাস এখনো আমাদের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে? আমরা কি রহমত, মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস পেয়ে আমলের দিকে অগ্রগামী হতে পেরেছি?

আমরা কি পেরেছি? পেরেছি আমরা?

এ রকম অনেক অনেক প্রশ্ন ও ভাবনা প্রত্যেক মুসলিমের অন্তরে উঁকি দেয় এবং সে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলে: আমি রমাদ্বান থেকে কি উপকৃত হলাম?!

নিশ্চয় রমাদ্বান একটি রূহানী বিদ্যালয়। পরবর্তী বছরের জন্য সম্বল অর্জন করার বিদ্যাপীঠ, অবশিষ্ট জীবনের জন্য প্রেরণা সঞ্চয় করার শিক্ষাকেন্দ্র। যখন সে এ বিষয় নিয়ে চিন্তা করবে, ভাববে, তখন সে উপকৃত হবে, নিজের জীবনে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।

নিশ্চয় রমাদ্বান ইতিবাচক পরিবর্তনের মৌসুম। আমরা এতে আল্লাহর হুকুম বিরোধী আমাদের আমল, চরিত্র, অভ্যাস ও আখলাক বদলে দিব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوۡمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنفُسِهِمۡ﴾ [الرعد: ١١]

“আল্লাহ কোনো জাতির পরিবর্তন ঘটান না, যতক্ষণ না তারা তাদের নিজের পরিবর্তন ঘটায়।”[২]

দ্বিতীয় ধাপ: সে নারীর মত হয়ো না, যে শক্ত করে সূতো পাকানোর পর তা টুকরো টুকরো করে ফেলে

প্রিয় পাঠক!

আপনি যদি রমাদ্বানে তাকওয়া অর্জন করে থাকেন এবং যথাযথভাবে রমাদ্বানের হক আদায়কারী একজন ভাগ্যবান হয়ে থাকেন, তবে আপনি সে নারীর মতো হবেন না, যে সূতো মজবুত করে পাকানোর পর তা টুকরো টুকরো করে ফেলে। আপনি আপনার এ অর্জন ভূলুণ্ঠিত করবেন না। যে রমাদ্বানের পর গুনাহে ফিরে গেল সে ঐ নারীর মতো, যে কাপড় বুনে তা ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলল। খুবই খারাপ জাতি তারা, যারা রমাদ্বান ছাড়া আল্লাহকে চেনে না।

প্রিয় পাঠক!

রমাদ্বানের ওয়াদা ভঙ্গের অনেক আলামত রয়েছে। উদাহরণত:

  • রমাদ্বানের পর প্রথম দিনেই জামাতের সঙ্গে সালাত ত্যাগ করা। রমাদ্বানে তারাবীর সালাতে মসজিদ ভরে যেত, অথচ তা ছিল সুন্নাত। এখন ফরয সালাতের সময় লক্ষ্য করছি লোকজন মসজিদে আসা ত্যাগ করে দিয়েছে, অথচ তা ফরয, এর ত্যাগকারী কাফের।
  • গান-বাদ্য, অশ্লীল ছবি ও নগ্ন দেহে ঘর থেকে বের হওয়া এবং নারী-পুরুষ এক সঙ্গে বিনোদন ও অশ্লীল স্পটে জমায়েত হওয়া ইত্যাদি।
  • অনেকে আবার শুধু গুনাহ করার জন্য টুরিস্ট ভিসা সংগ্রহ করে। বিভিন্ন অমুসলিম দেশে সফর করে। এভাবেই কি আমরা আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করব? এটা কি আল্লাহর নিয়ামতের সঙ্গে অকৃতজ্ঞতা নয়? এটা কি আমল কবুল হওয়ার আলামত?

না, এটা আমল কবুল হওয়ার আলামত নয়। আমল কবুল হওয়ার আলামত হলো, বান্দার অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হয়ে যাবে। সে আগের তুলনায় আরো বেশি কল্যাণমূলক কাজে আগ্রহী হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَإِذۡ تَأَذَّنَ رَبُّكُمۡ لَئِن شَكَرۡتُمۡ لَأَزِيدَنَّكُمۡۖ﴾ [ابراهيم: ٧]

“স্মরণ কর যখন, তোমাদের রব ঘোষণা দিয়েছেন যে, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তাহলে অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য নিয়ামত বৃদ্ধি করে দিব।”[৩]

তৃতীয় ধাপ: মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদত করা  

বান্দার ওপর ওয়াজিব সবসময় ও সব জায়গায় আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন থাকা। কী রমাদ্বান কী গায়রে রমাদ্বান—সব সময় তাঁর ইবাদত করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَٱسۡتَقِمۡ كَمَآ أُمِرۡتَ وَمَن تَابَ مَعَكَ﴾ [هود: ١١٢]

“কাজেই আপনি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছেন তাতে অবিচল থাকুন এবং আপনার সাথে যারা তাওবা করেছে তারাও।”[৪]

অন্যত্র তিনি বলেন,

﴿فَٱسۡتَقِيمُوٓاْ إِلَيۡهِ وَٱسۡتَغۡفِرُوهُ﴾ [فصلت: ٦]

“তাঁর নিকট অবিচল থাক এবং ইস্তেগফার কর তাঁর নিকট।”[৫]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«قُلْ: آمَنْتُ بِاللهِ، ثُمَّ اسْتَقِمْ»

“বল, আমি আল্লাহ ওপর ঈমান এনেছি। অতঃপর তুমি অটল থাক।”[৬]

যদি আমাদের থেকে রমাদ্বানের সাওম বিদায় নেয়, তবুও আমাদের সামনে অন্যান্য সাওম বিদ্যমান রয়েছে। যেমন শাওয়ালের সাওম, সোম ও বৃহস্পতিবারের সাওম এবং প্রতি মাসের ১২, ১৩ ও ১৪ তারিখের সাওম, আশুরা ও আরাফা ইত্যাদির সাওম।

আরো অনেক কল্যাণমূলক কাজ রয়েছে, যা রমাদ্বানের সঙ্গে খাস নয়, যেমন ফরয যাকাত, নফল সাদাকাহ, জিহাদ, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি।

এভাবে প্রতিটি দিন ও প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর ইবাদতে অটল থাকা। আর এভাবেই আল্লাহর সাক্ষাৎ প্রত্যাশা করা। আমরা বলতে পারি না, কখন আমাদের মৃত্যু চলে আসে।

চতুর্থ ধাপ: ঈদ প্রসঙ্গে

ঈদের দিনের কয়েকটি সুন্নত:

  • সালাতের পূর্বে সাদাকাহ ফিতর আদায় করা। ছোট-বড়, পুরুষ-মহিলা সবার পক্ষ থেকে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা।
  • ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে বেজোড় সংখ্যায় খেজুর খাওয়া।
  • মুসলিমদের সঙ্গে জামা‘আতে সালাত আদায় করা ও খুৎবায় অংশগ্রহণ করা।
  • হাঁটতে হাঁটতে ঈদগাহে যাওয়া এবং সালাতের আগ পর্যন্ত পুরুষদের জন্য সরবে ও মহিলাদের জন্য নীরবে তাকবীর বলা। ঈদের তাকবীর এভাবে বলবে:
    «اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ»
  • গোসল করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা ও সুন্দর পোশাক-আশাক পরিধান করা। নারীদের নগ্ন দেহে বের না হওয়া।
  • আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখা, অন্তর পরিষ্কার করা ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হওয়া।
  • ফকির-মিসকীন, ইয়াতীমদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা এবং তাদের অন্তরে খুশির সঞ্চার করার চেষ্টা করা।
  • ঈদের শুভেচ্ছা জানানো বৈধ। যেমন, কারো সঙ্গে দেখা হলে বলা,
    «تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ»
  • ঈদের পর দ্রুত কাযা সাওম থাকলে তা পালন করা, অন্যথায় শাওয়ালের ছয় সাওম পালন করা।

পরিশিষ্ট

আমাদের কর্তব্য নেক ও কল্যাণমূলক আমল করা। আমল কবুল না হওয়ার ভয় ও আমল কবুল হওয়ার আশা নিয়ে ঈদের দিন অতিবাহিত করা। আমরা আমাদের আমল কবুল হওয়ার আশা পোষণ করব এবং ঈদের দিনকে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মানের দিন জ্ঞান করব। জনৈক বুযুর্গ কতক লোকদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যারা খেলতামাশায় মত্ত ছিল। তিনি তাদের দেখে বলেন: আল্লাহ তোমাদের আমল কবুল করে থাকলে এটা কোনো শুকরিয়া আদায়কারীর কাজ হতে পারে না! আর যদি তোমাদের আমল কবুল না করে থাকেন, তবে এটা কোনো আখেরাতে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের আমল হতে পারে না।

আফসোস! যদি আমাদেরকে দেখতেন, কি বলতেন তিনি?

সমাপ্ত

সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা: প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী


[১] সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৬৭।
[২] সূরা আর-রা‘দ, আয়াত: ১১।
[৩] সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৭।
[৪] সূরা হুদ, আয়াত: ১১২।
[৫] সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৬।
[৬] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৮।
Share on