bn বাংলা
বাংলা বাংলা
English English
عربي عربي


+8801575-547999
সকাল ৯টা হতে রাত ১০টা
Community Welfare Initiative

কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে উমরাহ করার নিয়ম

গ্রন্থনা: প্রফেস ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

১. যখন মীকাতে পৌঁছবে তখন উমরাকারীর জন্য মুস্তাহাব হলো গোসল করা এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া; অনুরূপভাবে উমরা আদায়কারী মহিলাও গোসল করবে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হবে, যদিও এ সময় তার হায়েয বা নিফাস থাকে। হায়েয বা নিফাস ওয়ালা মহিলা ইহরাম বাঁধতে পারবে তবে সে তার হায়েয বা নিফাস থেকে পবিত্র হওয়া ও গোসল না করা পর্যন্ত বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবে না। উমরাকারী পুরুষ গায়ে সুগন্ধি লাগাবে, তবে তার ইহরামের কাপড়ে নয়। যদি মীক্কাতে পৌঁছার পর গোসল করা সম্ভব না হয় তবে তাতে দোষের কিছু নেই। অনুরূপভাবে যদি সম্ভব হয় মক্কায় পৌঁছার পর তাওয়াফ শুরু করার পূর্বে আবার গোছল করে নেওয়া মুস্তাহাব।

২. পুরুষ যাবতীয় সিলাইযুক্ত কাপড় (যেমন জামা, পাজামা, গেঞ্জি ইত্যাদি যা পোশাকের আকারে তৈরি তা) পরিধান থেকে বিরত থাকবে। একটি লুঙ্গি ও চাদর পরিধান করবে, তার মাথা খোলা রাখবে। তবে ইহরামের কাপড় দুটি সাদা ও পরিষ্কার হওয়া মুস্তাহাব।

তবে মহিলা তার সাধারণ পোষাকেই ইহরাম বাঁধবে, লক্ষ্য রাখবে যাতে কোনো প্রকার চাকচিক্য ও প্রসিদ্ধি লাভ করে এ রকম পোষাক না হয়।

৩. তারপর উমরার কাজে ঢুকার জন্য মনে মনে নিয়্যত (দৃঢ় সংকল্প) করবেন, আর মুখে উচ্চারণ করে বলবেন,

لَبَّيْكَ عُمْرَةً

‘‘লাব্বাইকা ‘উমরাতান’’

অর্থাৎ, আমি উমরা আদায়ের জন্য আপনার দরবারে উপস্থিত।

অথবা বলবেন,

اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ عُمْرَةً

‘‘আল্লাহুম্মা লাববাইকা উমরাতান’’।

অর্থাৎ, হে আল্লাহ আমি উমরা আদায়ের জন্য আপনার দরবারে উপস্থিত।

অন্য কারো জন্য উমরা করতে চাইলে (যদি আপনি পূর্বে আপনার উমরা আদায় করে থাকেন তবে) উচ্চারণ করবেন:

 اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ عُمْرَةً مِنْ فُلانٍ

‘‘আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা উমরাতান মিন ফুলান’’

অর্থাৎ, হে আল্লাহ আমি অমুকের (তার নাম ধরে) পক্ষ হতে উমরা পালনের জন্য হাযির।

যদি মুহরিম ভয় করে যে, সে রুগ্ন অথবা শত্রুর ভয়ের কারণে উমরা করতে সামর্থ হবে না তবে তার জন্য ইহরামের সময় শর্ত করে নেওয়া জায়েয। তিনি বলতে পারবেন:

«فِإِنْ حَبَسَنِيْ حَابِسٌ فَمَحَلِّيْ حَيْثُ حَبَسْتَنِيْ»

“ফায়িন হাবাসানি হাবিসুন ফামাহাল্লি হাইছু হাবাস্তানী’’

অর্থাৎ, যদি কোনো বাধাদানকারী আমাকে বাধা দেয়, তাহলে যেখানে আমি বাধাগ্রস্থ হবো সেখানেই আমি হালাল হয়ে যাবো।

মহিলা সাহাবী দুবায়া বিনতে যুবাইর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, আমি হজ করতে চাই, তবে রোগাক্রান্ত হয়ে যাওয়ার ভয় করছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন:

«حُجِّي، وَاشْتَرِطِي أَنَّ مَحِلِّي حَيْثُ حَبَسْتَنِي»

‘‘হজ করতে শুরু কর এবং শর্ত করে নাও এবং বল, যদি কোনো বাধাদানকারী আমাকে বাধা দেয়, তাহলে যেখানে আমি বাধাগ্রস্থ হবো সেখানেই আমি হালাল হয়ে যাব।”[১]

তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের তালবিয়া পাঠ করবেন, আর তা হলো—

«لَبَّيْكَ اللّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ»

(লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব‌বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাববাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি‘মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারীকা লাক।)

অর্থাৎ, উমরার জন্য আমি আপনার দরবারে হাযির। হে আল্লাহ! আমি আপনার দরবারে হাযির, আমি আপনার দ্বারে উপস্থিত, আপনার কোনো অংশীদার নেই, আপনার দরবারে উপস্থিত হয়েছি। সর্বপ্রকার প্রশংসা ও নিয়ামতের সামগ্রী সবই আপনার, আপনারই রাজত্ব, আপনার কোনো অংশীদার নেই।

উল্লিখিত দো‘আ পুরুষ লোকেরা মুখে জোরে উচ্চারণ করবেন, আর স্ত্রীলোকেরা চুপে চুপে বলবেন। অতঃপর অধিক মাত্রায় তালবিয়া পড়বেন এবং দো‘আ, যিকির-ইস্তেগফার করবেন।

পবিত্র মক্কায় পৌঁছার পর সম্ভব হলে গোসল করবেন, তারপর মসজিদে হারামে ঢুকার সময়ে ডান পা দিয়ে ঢুকবেন এবং মসজিদে ঢুকার দো‘আ পড়বেন, তা হলো—

«بِسْمِ اللهِ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلى رَسُوْلِ اللهِ، أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ، اللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ»

(বিসমিল্লাহ ওয়াস্‌সালাতু ওয়াস্‌সালামু ‘আলা রাসূলিল্লাহ,  আউযুবিল্লাহিল আযীম ওয়া বিওয়াজহিহিল কারীম ওয়া সুলতানিহিল কাদীম মিনাশ শায়তানির রাজীম। আল্লাহুম্মাফতাহ্ লি আবওয়াবা রাহমাতিক।)

অর্থাৎ, আল্লাহর নামে, আর তার রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর দুরূদ পাঠ করছি, আমি বিতাড়িত শয়তান হতে মহান আল্লাহর কাছে তাঁর সম্মানিত চেহারার এবং তাঁর অনাদি ক্ষমতার ওসীলায় আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আল্লাহ আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের দ্বারগুলো উম্মুক্ত করে দিন।

৪. তারপর যখন কা‘বার কাছে পৌঁছবেন তখনি তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিবেন। হাজরে আসওয়াদের কাছে যাওয়ার পর তার দিকে ফিরবেন, সম্ভব হলে ডান হাত দিয়ে তা স্পর্শ করবেন এবং চুমু খাবেন। ভীড় করে মানুষকে কষ্ট দিবেন না। হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করার সময়ে বলবেন:

بِسْمِ اللهِ، وَاللهُ أَكْبَرُ

(বিসমিল্লাহে ওয়াল্লাহু আকবার)

অথবা বলবেন:

اللهُ أَكْبَرُ

(আল্লাহু আকবার)

যদি হাজরে আসওয়াদ চুমু দেওয়া কষ্টকর হয় তাহলে হাত অথবা লাঠি দিয়ে স্পর্শ করার পর যে বস্তু দিয়ে স্পর্শ করেছেন তাতে চুমু খাবেন, আর যদি স্পর্শ করাও কষ্টকর হয় তবে হাজারে আসওয়াদের দিকে ইশারা করে বলবেন:

اللهُ أَكْبَرُ

(আল্লাহু আকবার)

তবে এ অবস্থায় হাত বা যা দ্বারা ইঙ্গিত করেছেন তাতে চুমু খাবেন না।

মনে রাখবেন, তাওয়াফ শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত হলো—ছোট বড় সর্বপ্রকার নাপাকী হতে পবিত্র অবস্থায় থাকা; কেননা তাওয়াফ সালাতের মতো, শুধুমাত্র তাওয়াফের সময় কথা বলার অনুমতি আছে।

৫. তাওয়াফ করার সময় আল্লাহর ঘর কা‘বাকে বাম পার্শ্বে রাখবেন এবং সাত চক্কর কা‘বার চারদিকে তাওয়াফ করবেন।  যখন রুকনে ইয়ামানীর কাছে আসবেন তখন যদি সম্ভব হয় তা ডান হাতে স্পর্শ করবেন। কিন্তু রুকনে ইয়ামানীকে চুমু খাবেন না। যদি রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করা সম্ভব না হয় তবে ছেড়ে সামনে চলে যাবেন এবং তাওয়াফ করতে থাকবেন, কোনো প্রকার ইশারা বা তাকবীর দিবেন না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তা বর্ণিত হয়নি। কিন্তু হাজরে আসওয়াদের নিকট যখনই পৌঁছবেন তখনি তা স্পর্শ করবেন, চুমু খাবেন এবং তাকবীর বলবেন, (যেমনটি পূর্বে বর্ণিত হয়েছে), যদি স্পর্শ করা সম্ভব না হয় তবে সে দিকে ইশারা করবেন এবং তাকবীর বলবেন।

এ তাওয়াফের মধ্যে পুরুষদের জন্য সুন্নত হলো এদতেবা‘ করা অর্থাৎ গায়ের চাদরের মধ্যভাগকে ডান বোগলের নিচে দিয়ে দু’পার্শ্বকে বাম কাঁধের উপর রাখা। তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করাও পুরুষদের জন্য সুন্নত। রমল হলো ছোট ছোট পদক্ষেপে দ্রুত হাঁটা।

তাওয়াফ করার সময়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দো‘আ বা যিকির নেই, প্রত্যেক চক্করেই ইচ্ছামত শরীয়তসম্মত যিকির ও দো‘আ পাঠ করা মোস্তাহাব। তবে তাওয়াফের প্রত্যেক চক্করের মধ্যে রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তীস্থানে নিম্নলিখিত দো‘আ পড়া সুন্নত:

﴿رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا حَسَنَةٗ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ حَسَنَةٗ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ

(রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়াফিল আখিরাতে হাসানাতাঁও ওয়া ক্বিনা ‘আযাবান-নার)।

অর্থাৎ, হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে দুনিয়ায় কল্যাণ দান করুন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান করুন। আর জাহান্নামের অগ্নি থেকে আমাদের রক্ষা করুন। [সূরা আল-বাকারা: ২০১]

সম্ভব হলে তাকবীর সহ হাজরে আসওয়াদকে স্পর্শ করা ও চুমু দেওয়ার মাধ্যমে সপ্তম চক্কর শেষ করবেন, কিন্তু সম্ভব না হলে পূর্বের মত শুধু ইশারা এবং তাকবীর পড়লেই যথেষ্ট।

তাওয়াফ শেষ করার পর গায়ের চাদর ভালো করে পরে নিবেন, অর্থাৎ কাঁধে এবং বুকে কাপড় দিয়ে নিবেন। ইদতেবা‘ অবস্থায় থাকবেন না। তারপর সম্ভব হলে মাকামে ইবরাহীমের পেছনে কিছুটা দূরে হলেও দু’রাকাত সালাত পড়বেন। আর যদি তা সম্ভব না হয়, তবে মসজিদের যে জায়গায় সম্ভব সেখানেই সালাত পড়বেন। প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে  ﴿قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡكَٰفِرُونَ(সূরা কাফিরূন) এবং দ্বিতীয় রাকাতে  ﴿قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ (সূরা ইখলাস) পড়া উত্তম। যদি অন্য কোনো সূরা পড়ে তবে কোনো দোষ নেই। এ দু’রাকাত সালাতের পর যদি হাজরে আসওয়াদ চুমু দেওয়া সম্ভব হয় তবে তা করবেন।

৭. তারপর সাফা পাহাড়ের কাছে যাবেন এবং এর উপর আরোহণ করবেন অথবা এর নিচে দাঁড়াবেন, তবে যদি সম্ভব হয় পাহাড়ের কিয়দংশে উঠা উত্তম। আর প্রথম চক্করের শুরুতে আল্লাহর এ বাণী পাঠ করুন:

﴿إِنَّ ٱلصَّفَا وَٱلۡمَرۡوَةَ مِن شَعَآئِرِ ٱللَّهِ

(ইন্নাচ্ছাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শা‘আ-ইরিল্লাহ)

অর্থাৎ, নিশ্চয় সাফা এবং মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্গত। [সূরা আল-বাকারা: ১৫৮]

এরপর কা‘বা শরীফকে সামনে রেখে প্রার্থনাকারীর ন্যায় দু’হাত উর্ধ্বে তুলে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করে তিনবার তাকবীর পড়ুন (আল্লাহু আকবার বলুন)। তিনবার করে দো‘আ করা হচ্ছে সুন্নত। অতঃপর তিনবার নিম্নোক্ত দো‘আ পড়ুন:

«لاَ إِلهَ إِلا اللهَ وَحْدَه لا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَه الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْر لا إِلهَ إِلا الله وَحْدَه أَنْجَزَ وَعْدَه وَنَصَر عَبْدَه وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَه»

(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, আনজাযা ওয়া’দাহু, ওয়া নাছারা আবদাহু, ওয়া হাযামাল আহজাবা ওয়াহদাহু)

অর্থাৎ, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই। তাঁর কোনো শরীক নেই। সমস্ত রাজত্ব ও প্রশংসা তাঁরই। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই। তিনি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন, তাঁর বান্দাকে বিজয় দিয়েছেন এবং তিনি একাই শত্রুকে পরাজিত করেছেন।

এই দো‘আর কিয়দংশ পড়লেও কোনো দোষ নেই। তবে যেহেতু শরীয়তে এখানে বেশি বেশি করে দো‘আ করার কথা বলা হয়েছে সেহেতু যাবতীয় দো‘আই এখানে করতে পারেন।

অতঃপর সাফা হতে নেমে মারওয়ার দিকে যাবেন। সায়ী করার সময়ে পুরুষগণ দুই সবুজ আলোর মধ্যবর্তী স্থানে দ্রুত চলবেন এবং এর আগে ও পরে স্বাভাবিকভাবে চলবেন। মহিলাগণ কোথাও দ্রুত চলবেন না; কারণ মহিলাগণ পর্দা করবেন, দ্রুত হাঁটা মহিলাদের পর্দার বিপরীত।

এরপর যখন মারওয়ার কাছে যাবেন, তখন তার উপর আরোহণ করবেন অথবা নিচে দাঁড়াবেন এবং আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন করবেন এবং সাফায় যেমনটি করেছেন এখানেও তেমনটি করবেন। অর্থাৎ মারওয়ার উপরে উঠার পরে কা‘বা শরীফকে সামনে রেখে প্রার্থনাকারীর ন্যায় দু’হাত উর্ধ্বে তুলে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করে তিনবার (আল্লাহু আকবার) তাকবীর উচ্চারণ করবেন। অতঃপর তিনবার নিম্নোক্ত দো‘আ পড়বেন:

«لاَ إِلهَ إِلا اللهَ وَحْدَه لا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَه الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْر لا إِلهَ إِلا الله وَحْدَه أَنْجَزَ وَعْدَه وَنَصَر عَبْدَه وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَه»

(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, আনজাযা ওয়া’দাহু, ওয়া নাছারা আবদাহু, ওয়া হাযামাল আহজাবা ওয়াহদাহু)

অর্থাৎ, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই। তাঁর কোনো শরীক নেই। সমস্ত রাজত্ব ও প্রশংসা তাঁরই। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই। তিনি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন, তাঁর বান্দাকে বিজয় দিয়েছেন এবং তিনি একাই শত্রুকে পরাজিত করেছেন।

সাফার মতো মারওয়া পাহাড়েও বেশি বেশি করে দো‘আ করার স্থান। যাবতীয় দো‘আই এখানে করতে পারেন।

তবে এখানে প্রথমে বর্ণিত কুরআনের আয়াতটুকু পাঠ করবেন না; কেননা কুরআনের আয়াতটুকু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করে শুধুমাত্র সাফা পাহাড়ে উঠার সময়ে পড়তে হয়।

তারপর মারওয়া থেকে নামবেন এবং যেখানে স্বাভাবিকভাবে হাঁটার সেখানে স্বাভাবিকভাবে হাঁটবেন, আর যেখানে দ্রুত চলার সেখানে দ্রুত চলবেন। এভাবে সাফা পাহাড়ে পৌঁছবেন। এভাবে সাতবার সায়ী করবেন। সাফা থেকে মারওয়া যাওয়া এক চক্কর, আবার মারওয়া থেকে সাফা পাহাড়ে আসা আরেক চক্কর, তাওয়াফের মতো যদি কেউ কোনো কিছুর উপর উঠে সায়ী করে তবে তাতেও দোষ নেই, বিশেষ করে যখন তার প্রয়োজন হবে।

তাওয়াফের মতো সায়ীর জন্যও কোনো নির্দিষ্ট ওয়াজিব যিকির নেই। বরং যেকোনো যিকির, দো‘আ ও কুরআন তিলাওয়াতের যা তার জন্য সহজসাধ্য হবে, তা-ই পাঠ করতে পারবেন। তবে এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যেসব যিকির ও দো‘আ সাব্যস্ত রয়েছে, তার প্রতি লক্ষ্য রাখা মোস্তাহাব। অনুরূপভাবে যাবতীয় নাপাকী হতে পবিত্র হওয়াও মোস্তাহাব। তবে যদি কেউ অপবিত্র অবস্থায়ও সায়ী করে তার সায়ী শুদ্ধ হবে, তাতে কোনো অসুবিধা নেই।

৮. সাঈ পূর্ণ করে মাথার চুল হলক করবেন (কামাবেন) অথবা ছোট করে ছেঁটে নিবেন। তবে কামানো উত্তম। যদি হজের আগে আপনি মক্কা এসে থাকেন এবং হজের বেশি দিন বাকী না থাকে তবে উত্তম হলো উমরার পর চুল ছোট করে ছাঁটা যাতে হজের ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার সময় হলক করতে পারেন।

খেয়াল রাখবেন আপনার চুল কাটা বা ছাঁটা যা-ই- করেন না কেন সম্পূর্ণ মাথা থেকে হতে হবে। সামান্য কিছু কাটলে বা ছাঁটলে হবে না। এটা পুরুষের ক্ষেত্রে।

মহিলাগণ তাদের চুল একত্র করে চুলের অগ্রভাগ থেকে এক আঙুলের অগ্রভাগ পরিমাণ কাটবেন। এভাবে আপনার উমরা পূর্ণ হয়ে যাবে এবং ইহরামের কারণে ইতঃপূর্বে যা হারাম ছিল, এক্ষণে তা হালাল হয়ে যাবে।

আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর প্রদর্শিত নিয়ামত ইবাদত করার তৌফিক দিন।
(আমাকে আপনাদের দো‘আয় ভুলবেন না)


[১] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২০৭।
Share on