bn বাংলা
বাংলা বাংলা
English English
عربي عربي


+8801575-547999
সকাল ৯টা হতে রাত ১০টা
Community Welfare Initiative

ঈদে মীলাদুন্নবী [শরী‘আতের দৃষ্টিতে কতটুকু শুদ্ধ]

কয়েক বছর পূর্বে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার এক মসজিদে উপস্থিত হলাম প্রতিদিনের মতো এশার সালাত আদায় করতে। দেখলাম আজ মসজিদ কানায় কানায় পূর্ণ। অন্য দিনের চেয়ে কম হলেও মুসল্লীদের সংখ্যা দশগুণ বেশি। সাধারণত এ দৃশ্য চোখে পড়ে রমযান ও শবে কদরে। মনে করলাম আজ হয়তো কারো বিবাহ অনুষ্ঠান কিংবা জানাযা। এত লোক সমাগমের কারণ জিজ্ঞেস করলাম ইমাম সাহেবকে। তিনি বললেন আজ ১২ই রবিউল আউয়ালের রাত। মীলাদুন্নবীর উৎসবের রাত।

সম্মানিত পাঠক!

এ রাত ও পরবর্তী দিন ১২ই রবিউল আউয়াল অত্যন্ত জাকজমকপূর্ণভাবে এক সময় পালিত হত বৃহত্তর চট্রগ্রাম, নোয়াখালী ও সিলেটের কিছু অঞ্চলে। দেশের অন্যান্য এলাকায়ও পালিত হত, তবে তুলনামুলক কম গুরুত্বে। এ রাতে খাওয়া-দাওয়া, আনন্দ উৎসবে মুখর হয়ে উঠে অনেক পাড়া-মহল্লা। যারা এটি পালন করে তাদের উৎসব মুখরতা দেখলে মনে হবে নিশ্চয় এটি হবে মুসলিমদের সবচেয়ে বড় উৎসবের দিন। আর এটি তাদের অনেকে বিশ্বাসও করে। তাই তো শ্লোগান দেয়, দেয়ালে লিখে ‘‘সকল ঈদের সেরা ঈদ, ঈদে মীলাদ।’’

কিন্তু বাস্তবে কি তাই? দীন ইসলামে ঈদে মীলাদ বলতে কি কিছু আছে? ইসলামে ঈদ কয়টি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম দিবস কি ১২ই রবিউল আউয়াল? নিশ্চিত ও সর্বসম্মতভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত বা মৃত্যু দিবস কি ১২ই রবিউল আউয়াল নয়? যে দিনে রাসূলে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা গেলেন সে দিনে আনন্দ উৎসব করা কি নবী প্রেমিক কোনো মুসলিমের কাজ হতে পারে? শরী‘আতের দৃষ্টিতে ঈদে মীলাদ পালন করা কি জায়েয? এটি কি বিধর্মীদের অনুকরণ নয়?

এ সকল প্রশ্নের উত্তর খুজতে যেয়ে এ সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম দিবস কবে?

কোন তারিখে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্ম গ্রহণ করেছেন তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। অনেকের মতে তার জন্ম দিন হলো ১২ই রবিউল আউয়াল। আবার অনেকের মতে ৯ই রবিউল আউয়াল। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে গবেষণা করে প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিন আসলে ছিল ৯ই রবিউল আউয়াল সোমবার। বর্তমান বিশ্বে সকলের নিকট সমাদৃত, সহীহ হাদীস নির্ভর বিশুদ্ধতম সীরাতগ্রন্থ হলো ‘আর-রাহীক আল-মাখতূম’। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম দিবস সম্পর্কে এ গ্রন্থে বলা হয়েছে ‘রাসূলু্ল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৫৭১ খৃস্টাব্দে ৯ই রবিউল আউয়াল, মোতাবেক ২০ এপ্রিল, সোমবার প্রত্যুষে জন্ম গ্রহণ করেন। এটি গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যুগের প্রখ্যাত আলেম মুহাম্মাদ সুলাইমান আল-মানসূর ও মিশরের প্রখ্যাত জোতির্বিজ্ঞানী মাহমূদ পাশা।

আল্লামা শিবলী নু‘মানী ও সাইয়্যেদ সুলাইমান নদভী রহ. প্রণীত সাড়া-জাগানো সীরাত-গ্রন্থ হলো ‘সীরাতুন্নবী’। এ গ্রন্থে বলা হয়েছে ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম দিবস সম্পর্কে মিশরের প্রখ্যাত জোতির্বিজ্ঞানী মাহমূদ পাশা এক পুস্তিকা রচনা করেছেন। এতে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র বেলাদত (জন্ম) ৯ই রবিউল আউয়াল রোজ সোমবার, মোতাবেক ২০ এপ্রিল ৫৭১ খৃস্টাব্দ। মাহমূদ পাশা যে প্রমাণপত্র দিয়েছেন তা কয়েক পৃষ্ঠাব্যাপী বিস্তৃত।’’

তাদের গবেষণা বিষয়ের একটি দিক হলো যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহীহ হাদীসে নিজেই বলেছেন, তাঁর জন্মের দিন হচ্ছে সোমবার। মাহমূদ পাশা গবেষণা ও হিসাব করে দেখিয়েছেন যে, সে বছর ১২ রবিউল আউয়াল তারিখের দিনটা সোমবার ছিল না ছিল বৃহস্পতিবার। আর সোমবার ছিল ৯ই রবিউল আউয়াল।

তাই বলা যায়, জন্ম তারিখ নিয়ে অতীতে যে অস্পষ্টতা ছিল বর্তমানে তা নেই। মাহমূদ পাশার গবেষণার এ ফল প্রকাশিত হওয়ার পর সকল জ্ঞানী ব্যক্তিরাই তা গ্রহণ করেছেন এবং কেউ তার প্রমাণ খণ্ডন করতে পারেন নি। অতএব, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম দিবস হলো ৯ই রবিউল আউয়াল। ১২ই রবিউল আউয়াল নয়। আর সর্বসম্মতভাবে তাঁর ইন্তেকাল দিবস হলো ১২ই রবিউল আউয়াল। যে দিনটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মোৎসব পালন করা হয়, সে দিনটি মূলত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইটি ওয়াসাল্লামের মিলাদ (জন্ম) দিবস না, বরং তা ছিল তাঁর মৃত্যু দিবস। তাই দিনটি ঈদ হিসেবে পালন করার আদৌ কোনো যৌক্তিকতা নেই।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিন পালন সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি

কোনো ব্যক্তির জন্মদিবস পালন করা ইসলামসম্মত নয়। এটি হলো খৃষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধসহ বিভিন্ন অমুসলিমদের রীতি। ইসলাম কারো জন্মদিবস পালন অনুমোদন করে না। এর প্রমাণসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলো:

এক. দীন ইসলাম আজ পর্যন্ত অবিকৃত আছে এবং ইনশাআল্লাহ থাকবে। ইসলামে সকল হুকুম আহকাম, আচার-অনুষ্ঠান সুনির্ধারিত ও কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস দ্বারা প্রমাণিত; কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্ম দিবস বা মীলাদ পালনের কথা কোথাও নেই। এমনকি নবী প্রেমের নজীরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের কেউ এ ধরনের কাজ করেছেন বলে কোনো প্রমাণ নেই। তাই ঈদে-মীলাদ পালন করা নিশ্চয় একটি বিদ‘আতকর্ম। আর বিদ‘আত জঘন্য গুনাহের কাজ।

দুই. ইসলামে কম হলেও একলাখ চব্বিশ হাজার নবী, তারপরে খোলাফায়ে রাশেদীন ও অসংখ্য সাহাবী, মনীষী আওলিয়ায়ে কেরাম জন্ম গ্রহণ করেছেন ও মারা গেছেন। যদি তাদের জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালন ইসলাম-সমর্থিত হত বা সাওয়াবের কাজ হতো তাহলে বছর ব্যাপী জন্ম-মৃত্যু দিবস পালনে ঘূর্ণাবর্তে আবদ্ধ হয়ে যেতে হত আমাদের সকল মুসলিমদের। অন্যান্য কাজসর্ম করার ফুরসত মিলত থোরই।

তিন. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিন পালনের প্রস্তাব সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। যেমন, হিজরী ক্যালেন্ডার প্রবর্তিত হওয়া সময় উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে বৈঠকে বসলেন। কোনো এক স্মরনীয় ঘটনার দিন থেকে একটি নতুন বর্ষগণনা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কেউ কেউ প্রস্তাব করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম তারিখ থেকে সন গণনা শুরু করা যেতে পারে। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এ প্রস্তাব বাতিল করে দিয়ে বললেন যে, এ পদ্ধতি খৃষ্টানদের। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর এ সিদ্ধান্তের সাথে সকল সাহাবায়ে কেরাম একমত পোষণ করলেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরত থেকে ইসলামী সন গণনা আরম্ভ করলেন।

চার. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ ছিলেন সত্যিকারার্থে নবীপ্রেমিক ও সর্বোত্তম অনুসারী। নবী প্রেমের বে-নজীর দৃষ্টান্ত তারাই স্থাপন করেছেন। তারা কখনো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিনে ঈদ বা অনুষ্ঠান পালন করেন নি। যদি এটি করা ভালো হত ও মহব্বতের পরিচায়ক হতো, তবে তারা তা অবশ্যই করতেন। আর জন্মোৎসব পালন করার কালচার সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা ছিল না- তা বলা যায় না। কেননা তাদের সামনেই তো খৃষ্টানরা ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মদিন (বড়দিন) উদযাপন করত।

পাচ. জন্ম দিবস কেন্দ্রিক উৎসব-অনুষ্ঠান খৃষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্যান্য অমুসলিমদের ধর্মীয় রীতি। যেমন, বড় দিন, জন্মাষ্ঠমী, বৌদ্ধপূর্ণিমা ইত্যাদি। তাই এটি মুসলিমদের জন্য পরিত্যাজ্য। বিধর্মীদের ধর্মীয় রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান যতই ভালো দেখা যাক না, কখনো তা মুসলিমদের জন্য গ্রহণ করা জায়েয নয়। এ কথার সমর্থনে কয়েকটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করলাম।

(ক) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«من تشبه بقوم فهو منهم»

‘‘যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাদৃশ্যতা গ্রহণ করবে সে তাদের অন্তর্ভূক্ত বলে গণ্য হবে।’’

(খ) আযানের প্রচলনের সময় কেউ কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রস্তাব করলেন যে, সালাতের সময় হলে আগুন জ্বালানো যেতে পারে। কেউ প্রস্তাব করলেন ঘন্টাধনি করা যেতে পারে। কেউ বললেন বাঁশী বাজানো যেতে পারে। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। বললেন আগুন জ্বালানো হলো অগ্নিপুজারী পারসিকদের রীতি। ঘন্টা বাজানো খৃষ্টানদের ও বাঁশী বাজানো ইয়াহূদীদের রীতি।

(গ) মদীনার ইয়াহূদীরা আশুরার দিনে একটি সাওম পালন করত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি সাওম রাখতে নির্দেশ দিলেন, যাতে তাদের সাথে সাদৃশ্যতা না হয়।

(ঘ) হিজরী সনের প্রবর্তনের সময় অনেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিন থেকে সন গণনার প্রস্তাব করেন। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যাত হয়, খৃষ্টানদের অনুকরণ হওয়ার কারণে।

ইসলামে ঈদ কয়টি?

ইসলামে ঈদ হলো দু’টি। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা।

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قدم رسول الله صلى الله عليه وسلم المدينة، ولهم يومان يلعبون فيهما، قال: ما هذان اليومان؟ قالوا كنا نلعب فيهما في الجاهلية، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : قد أبدلكم الله خيراً منهما: يوم الأضحى ويوم الفطر»

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আসলেন তখন দেখলেন বছরের দু’টি দিনে মদীনাবাসীরা আনন্দ-ফুর্তি করছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: এ দিন দুটো কী? তারা বলল যে আমরা ইসলামপূর্ব মুর্খতার যুগে এ দু’দিন আনন্দ-ফুর্তি করতাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‘‘আল্লাহ তা‘আলা এ দু’দিনের পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দু’টি দিন তোমাদের দিয়েছেন। তা হলো ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর।”[১]

ইসলামে ঈদ শুধু দু’টি এ বিষয়টি শুধু সহীহ হাদীস দ্বারাই প্রমাণিত নয়, তা রবং ইজমায়ে উম্মত দ্বারাও প্রতিষ্ঠিত। যদি কেউ ইসলামে তৃতীয় আরেকটি ঈদের প্রচলন করে তবে তা কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না। বরং তা দীনের মধ্যে একটা বিদ‘আত ও বিকৃতি বলেই গণ্য হবে। যখন কেউ বলে ‘সকল ঈদের সেরা ঈদ- ঈদে মীলাদ’ তখন স্বাভাবিকভাবেই এর অর্থ হয় ইসলামে যতগুলো ঈদ আছে তার মধ্যে ঈদে মীলাদ হলো শ্রেষ্ঠ ঈদ। কীভাবে এটি সম্ভব? যে ঈদকে আল্লাহ ও তার রাসূল স্বীকৃতি দেন নি। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও ইমামগণ যে ঈদকে প্রত্যাখ্যান করেছেন তা ইসলামে শ্রেষ্ঠ ঈদ বলে বিবেচিত হতে পারে কীভাবে? কোনোভাবেই নয়। আর যে ঈদ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচলন করে গেলেন তা শ্রেষ্ঠ হবে না। এটি কীভাবে মেনে নেওয়া যায়? কোনোভাবেই নয়, তবে শুধু একদিক থেকে মেনে নেওয়া যায়, আর তা হলো যত ভূয়া ও ভেজাল ঈদ আছে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো এই ঈদ!

তা সত্ত্বেও যদি ঈদ পালন করতেই হয় তবে তা ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে না করে ৯ই রবিউল আউয়ালে করা যেতে পারে। তাহলে অন্তত সাইয়েদুল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু দিবসে ঈদ পালন করার মতো ধৃষ্ঠতা ও বেয়াদবির পরিচয় দেওয়া হবে না। অবশ্য এটাও কিন্তু বিদ‘আত বলে গণ্য হবে।

সার কথা ১২ই রবিউল আউয়ালে ঈদে-মীলাদ উদযাপন করা শরীয়ত বিরোধী কাজ। এ ধরণের কাজ হতে যেমন নিজেদের বাঁচাতে হবে তেমনি অন্যকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে।

যে কারণে ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করা যাবে না

প্রথমত: ইসলাম পরিপূর্ণ দীন। কুরআন ও হাদীসের কোথাও ঈদে-মীলাদ পালন করতে বলা হয় নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবায়ে কেরাম বা তাবেঈন কখনো এটি পালন করেন নি। তাই এটি বিদ‘আত ও গোমরাহী।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد»

“আমাদের এ দীনে যে নতুন কোনো বিষয় প্রচলন করবে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম।)

তিনি আরো বলেন,

«إياكم ومحدثات الأمور، فإن كل محدثة بدعة وكل بدعة ضلالة»

‘‘সাবধান! ধর্মে প্রবর্তিত নতুন বিষয় থেকে সর্বদা দূরে থাকবে। কেননা নব-প্রবর্তিত প্রতিটি বিষয় হলো বিদ‘আত ও প্রতিটি বিদ‘আত হলো পথভ্রষ্ঠতা।’’[২]

দ্বিতীয়ত: ঈদে মীলাদুন্নবী হলো খৃষ্টানদের বড় দিন, হিন্দুদের জন্মাষ্ঠমী ও বৌদ্ধদের বৌদ্ধ-পূর্ণিমার অনুকরণ। ধর্মীয় বিষয়ে তাদের আচার-অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করা ঈমানের দাবী। অথচ ঈদে-মীলাদ পালনের মাধ্যমে তাদের বিরোধিতা না করে অনুসরণ করা হয়।

তৃতীয়ত: সর্বসম্মতভাবে ১২ই রবিউল আউয়াল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু দিবস। এতে কারো দ্বিমত নেই ও কোনো সন্দেহ নেই। এ দিনে মুসলিম উম্মাহ ও সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন। এসব জেনে-শুনে ঠিক এ দিনটিতে ঈদ তথা আনন্দ-উৎসব পালন করা চরম বেঈমানী ও নবীর শানে বেয়াদবী ভিন্ন অন্য কিছু হতে পারে না।

চতুর্থত: মীলাদুন্নবী পালন করে অনেকে মনে করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি তাদের দায়ীত্ব-কর্তব্য আদায় হয়ে গেছে। তাই তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত ও আদর্শের প্রতি কোনো খেয়াল রাখেন না; বরং তারা সীরাতুন্নবী নামের শব্দটাও বরদাশদ করতে রাজী নয়।

পঞ্চমত: আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নির্ধারিত ইসলামের দু’ঈদের সাথে তৃতীয় আরেকটি ঈদ সংযোজন করা দীন ইসলাম বিকৃত করার একটা অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যথার্থ অনুসরণ করা হলো ভালোবাসার দাবি

আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কেন রাসূল হিসেবে প্রেরণ করলেন? তার প্রতি আমাদের করণীয় কী? আল্লাহ তা‘আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ জন্য পাঠিয়েছেন যে, আমরা যেন তার অনুসরণ করি। তার নির্দেশনা মতো আল্লাহর হুকুম মান্য করি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذۡنِ ٱللَّهِ﴾ [النساء: ٦٤]

‘‘আমরা রাসূলকে এ জন্যই পাঠিয়েছি যে, আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে তার আনুগত্য করা হবে।’’ [সূরা আন-নিসা: ৬৪]

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসা ও তাকে মুহাব্বত করা হবে ঈমানের দাবী। যার মধ্যে রাসূলের ভালোবাসা নেই সে ঈমানদার নয়। রাসূলের ভালোবাসার পরিচয় দিবেন কীভাবে? এর দু’টি পদ্ধতি রয়েছে।

এক. আল্লাহর নির্দেশ মতো জীবনের সর্বক্ষেত্রে তার অনুসরণ করে ও এর জন্য যে কোনো ত্যাগ ও কুরবানী স্বীকারে প্রস্তুত থেকে।

দুই. তাঁকে অনুসরণ না করে, তার গুণাগুণ ও প্রশংসা বর্ণনায় ব্যস্ত থেকে, মীলাদ পড়ে, মীলাদুন্নবী উদযাপন করে।

আসলে ভালোবাসা প্রমাণ করার কোন পদ্ধতিটি সঠিক? আমার মনে হয় মতলববাজ ব্যতীত সকল মানুষ উত্তর দিবে সঠিক হলো প্রথমটিই।

আবু লাহাব রাসূলুললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসতেন। এতটাই ভালোবাসতেন যে, তাঁর জন্মের সুসংবাদ যে ক্রীতদাসীর কাছে শুনলেন, আনন্দের অতিশয্যে সে ক্রীতদাসী সুয়াইবাকে মুক্ত করে দিলেন এবং নবুওয়াত পূর্ব পূর্ণ চল্লিশ বছর তার ভালোবাসা ছিল অক্ষত। কিন্তু রাসূলের আনুগত্য না করার কারণে পাল্টে গেল আবু লাহাবের পুরো চেহারা।

আবু তালিবের কথা কারো অজানা নয়। আল্লাহর রাসূলের একেবারে শৈশব থেকে পঞ্চাশ বছর বয়স পর্যন্ত তাকে নিজ সন্তানের মতো ভালোবেসেছেন। লালন-পালন করেছেন আদর, স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা দিয়ে। আর এ ভালোবাসতে গিয়ে অনেক কষ্ট স্বীকার করেছেন। দীর্ঘ তিন বছর খেয়ে না খেয়ে উপোষ থেকে শো‘আবে আবু তালিব উপত্যকায় নির্বাসিত জীবন-যাপন করেছেন তাঁরই জন্য। ছায়ার মতো সাথে থেকেছেন বিপদ-আপদে। রাসূল মুহাম্মাদের অনুসরণ করা দরকার এটি মুখে স্বীকারও করেছেন। কবিতাও রচনা করেছেন তাঁর উদ্দেশ্যে। কিন্তু অনুসরণ করলেন না তাঁর আনীত দাওয়াত ও পয়গামের। ফলে সবকিছুই বৃথা গেল। তার জন্য দো‘আ-প্রার্থনা করতেও নিষেধ করা হলো।

পশ্চিমা বহু লেখক ও চিন্তাবিদরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বলে স্বীকার করেন। কিন্তু তিনি যে সকল মানুষের জন্য অনুসরণীয়-অনুকরণীয় নির্ভুল আদর্শ, তাঁর নির্দেশিত পথই একমাত্র মুক্তির পথ, এ বিষয়টি তাদের কাছে বোধগম্য হয়ে উঠে না।

গ্যেটে কারলাইল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি অতি সাম্প্রতিক মাইকেল হার্ট (দি-হান্ড্রেড লেখক) পর্যন্ত বহু লেখক, গবেষক, চিন্তাবিদ ও রাজতৈনিক নেতা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে অনেক সপ্রশংস- উক্তি, সীমাহীন ভক্তির নৈবদ্য পেশ করেছেন, অকুণ্ঠ চিত্তে স্বীকার করেছন, আবহমান পৃথিবীর সর্বকালীন প্রেক্ষাপটে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই সর্বোত্তম ব্যক্তি।

কিন্তু প্রশ্ন হলো তাদের এ প্রশংসা ও ভালোবাসার দাবি কি কোনো কল্যাণে আসবে?

আজকে যারা নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুহাব্বত ও ভালোবাসার দাবি নিয়ে তাঁরই নির্দেশ লংঘন করে বিভিন্ন বিদ‘আতী কাজ-কর্মের প্রসারে লিপ্ত। তাঁর দীনে যা তিনি অনুমোদন করে যান নি, তারা যা অনুমোদন করতে ব্যস্ত তাদের পরণিতি কী হবে? এর আলোকে বিষয়টি বিবেচনা করার দাবি অসঙ্গত হবে না।

এ ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি বাণী পেশ করা যেতে পারে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«ألا وإني فرطكم على الحوض وأكاثر بكم الأمم، فلا تسودوا وجهي، ألا وإني مستنقذ أناسا ومستنقذ مني أناس، فأقول يا رب أصيحابي! فيقول إنك لا تدري ما أحدثوا بعدك».

‘‘শুনে রাখো! হাউজে কাউসারের কাছে তোমাদের সাথে আমার দেখা হবে। তোমাদের সংখ্যার আধিক্য নিয়ে আমি গর্ব করব। সেদিন তোমরা আমার চেহারা মলিন করে দিও না। জেনে রাখো! আমি সেদিন অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করার চেষ্টা চালাব, কিন্তু তাদের অনেককে আমার থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া হবে। আমি বলব: হে আমার রব! তারা তো আমার প্রিয় সাথী-সংঙ্গী, আমার অনুসারী। কেন তাদের দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে? তিনি উত্তর দিবেন: আপনি জানেন না, আপনার চলে আসার পর তারা দীনের মধ্যে কী কী নতুন বিষয় আবিস্কার করেছে।”[৩]

অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসতে হবে। তার জন্য বেশি বেশি করে দুরূদ ও সালাম পেশ করতে হবে। তার প্রশংসা করতে হবে। সর্বোপরি তাঁর সকল আদর্শ ও সুন্নাতের অনুসরণ অনুকরণ করতে হবে। কিন্তু এগুলো করতে যেয়ে তিনি যা নিষেধ করেছেন আমরা যেন তার মধ্যে পতিত না হই। যদি হই তাহলে বুঝে নিতে হবে ভালো কাজ করতে গিয়ে শয়তানের ফাঁদে আমরা পা দিয়েছি।

একটি সংশয় নিরসন

যারা বিদ‘আতে লিপ্ত তারা অনেক সময় তাদের বিদ‘আতী কাজকে সঠিক বলে প্রমাণ করার জন্য কুরআন বা হাদীস থেকেও উদ্ধৃতি দেন, যদিও তার পন্থা-পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য নয়। ঈদে মীলাদের ব্যাপারে তাদের অনেকে বলেন ঈদে মীলাদ বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম দিন পালন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হাদীসটি হলো:

আবু কাতাদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

«أن رسول الله صلى الله عليه وسلم سئل عن صوم يوم الاثنين، فقال: ذلك يوم ولدت فيه ويوم بعثت فيه أو أنزل علي فيه».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোমবারে সাওম পালন করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি বললেন, ‘‘এ দিনে আমার জন্ম হয়েছে এবং এ দিনে আমাকে নবুওয়াত দেওয়া হয়েছে বা আমার ওপর কুরআন নাযিল শুরু হয়েছে।’’[৪]

তারা এ হাদীস পেশ করে বলতে চান যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবার দিনে জন্মগ্র্রহণ করেছেন বলে ঐ দিনে সাওম পালন করে তা উদযাপন করাকে সুন্নাত করেছেন। তাই জন্মদিন পালন এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

জওয়াব

এক. আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু জন্ম দিনের কারণে সোমবার সাওম পারন করতে বলেন নি, বরং বৃহস্পতিবারও সাওম পালন করাকে সুন্নাত করেছেন। সেটা তাঁর জন্মদিন নয়।

হাদীসে এসেছে: আবু হুরারা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«تعرض الأعمال يوم الاثنين والخميس، فأحب أن يعرض عملي وأنا صائم».

‘‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। কাজেই আমি পছন্দ করি যখন আমার আমল পেশ করা হবে তখন আমি সাওম পালনকারী থাকব।’’[৫]

উল্লিখিত হাদীস দ্বারা কয়েকটি বিষয় স্পষ্টভাবে বুঝে আসে। তা হলো:

দুই. যদি জন্ম দিবসের কারণে সাওম পালন করার বিধান হতো তাহলে শুধু সোমবারে সাওম রাখা সুন্নাত হতো, কিন্তু তা হয় নি; বরং বৃহস্পতিবার ও সোমবার সপ্তাহে দু’দিন সাওম পালন করাকে সুন্নাত করা হয়েছে। তাই এ সাওমের কারণ শুধু জন্ম দিবস নয়।

তিন. এ দু’দিনে সাওম সুন্নাত হওয়ার কারণ হলো, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে আমল পেশ হওয়া।

চার. সোমবারের ফযীলত দু’ কারণে। জন্মদিন ও নবুওয়াতপ্রাপ্তি বা কুরআন নাযিল। শুধু জন্ম দিন হিসেবে নয়।

পাঁচ. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্মদিন সোমবারে ঈদ পালন করতে বলেন নি, বরং ঈদের বিরোধীতা করে সাওম রাখতে বলেছেন।

ছয়. সাওম হলো ঈদের বিপরীত। সাওম পালন করলে সে দিন ঈদ করা যায় না, ঈদ ও সাওম কোনো দিন এক তারিখে হয় না। হাদীসের দাবি হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিনে সাওম রাখা। কিন্তু সাওম না রেখে তার বিপরীতে পালন করার পিছনে কি যুক্তি থাকতে পারে?

সাত. তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া যায় যে, এ হাদীসটিতে রাসূলের জন্মদিন পালনের ইঙ্গিত রয়েছে। তাহলে হাদীস অনুযায়ী প্রতি সোমবার কেন ঈদ পালন করা হচ্ছে না? সোমবারেও নয় বরং ঈদ পালন করা হচ্ছে বছরে একবার রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে। সে দিন সোমবার না হলেও পালিত হয়। এ হাদীসে কি ১২ই রবিউল আউয়ালে জন্মদিন পালন করতে বলা হয়েছে?

আট. যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া হয় উল্লিখিত হাদীসটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিন পালন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে তা হলে আমি বলব হ্যাঁ, হাদীসটিতে জন্মদিবস কীভাবে পালন করতে হবে তাও বলে দেওয়া হয়েছে। তা হলো ঐ দিনে সাওম পালন করা। কিন্তু ঐ দিনে সাওম পালন না করে বেশি খাওয়া-দাওয়া করা হয়। ঈদ নাম দিয়ে সাওম পালন করার বিরোধিতা করা হয়। তাহলে তাদের কাছে সাওম পালন করার সুন্নাতের চেয়ে খাওয়া-দাওয়া বেশি প্রিয়? মনে রাখা উচিৎ, প্রেম-মুহাব্বতের সত্যিকার প্রমাণ হলো ত্যাগ ও কুরবানী করা, উপোস থাকা, কষ্ট স্বীকার করা। খাওয়া-দাওয়া ও আমোদ-ফুর্তি নয়। মুখে নবী-প্রেমের দাবি ও কাজ-কর্মে তার আদর্শের বিরোধিতা করার নাম কখনো মুহাব্বত হতে পারে না, বরং বলা চলে ধোকাবাজি।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ভালোবাসা এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য করার তাওফীক দান করুন! আমিন।

সমাপ্ত

আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
সম্পাদনা: প্রফেসর ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া


[১] সুনান আবু দাউদ।
[২] আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবন মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ।
[৩] ইবন মাজাহ।
[৪] সহীহ মুসলিম।
[৫] সহীহ মুসলিম ও সুনান তিরমিযী।
Share on