bn বাংলা
বাংলা বাংলা
English English
عربي عربي


+8801575-547999
সকাল ৯টা হতে রাত ১০টা
Community Welfare Initiative

কালেমা শাহাদাত (পর্ব-৩)

যেসব কারণে কালেমায়ে শাহাদাতের মাধ্যমে আনীত ঈমান নষ্ট হয়ে যায়:

পূর্বের আলোচনা থেকে জানতে পারলাম যে لا إله إلا الله وأن محمد رسول الله এর সাক্ষ্য প্রদান ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার পূর্ব শর্ত। যে ব্যক্তি এই কালেমাকে মৌখিকভাবে উচ্চারণ করবে, অর্থ ও তাৎপর্যের স্বীকৃতি প্রদান করবে এবং এর আবেদনের উপর আমল করবে, সে এ দুনিয়াতে সৌভাগ্যবান হবে, পরম আত্মপ্রাশান্তি লাভ করবে, অবিচ্ছেদ্যভাবে ইসলামের উপর বিদ্যমান আছে বলে বিবেচিত হবে। আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি তার অর্জিত হবে, ফলে সে জান্নাত লাভে ধন্য হবে। জাহান্নাম থেকে নিস্কৃতি পাবে।

এতদসত্বেও কখনো-কখনো বান্দার ওপর এমন সব অবস্থার আবর্তন ঘটে, যা তার সাক্ষ্য ভঙ্গ ও বাতিল করে দেয়। ফলে এর সূত্র ধরে সৌভাগ্য রূপ নেয় দূর্ভাগ্যের, প্রশান্তি রূপ নেয় অশান্তি ও ভয়ের, স্থীতিশীলতা রূপ নেয় পদস্খলন ও পথভ্রষ্টতার। আল্লাহর সন্তুষ্টি, জান্নাত লাভ, জাহান্নাম থেকে মুক্তির পরিবর্তে আল্লাহর ক্রোধ, চিরস্থায়ী জাহান্নাম ও ঘৃণিত বাসস্থানের যোগ্য বলে বিবেচিত হয়।

এ সাক্ষ্য ভঙ্গ ও দীনচ্যুত হয়ে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। বর্তমান যুগে যাতে মানুষ সচারাচর লিপ্ত হয়, তার মধ্য হতে গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হল:

১. আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক করা: অর্থাৎ শির্কে আকবরের কোনো প্রকারে লিপ্ত হওয়া। যে কারণে সে দীন থেকে বের হয়ে যাবে। জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং সেখানে স্থায়ীভাবে থাকবে। যেমন, আল্লাহর জন্য এবং মূর্তির জন্য সাজদাহ করা। আল্লাহ এবং তার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে কুরবানী করা। মান্নত করা। কবর এবং মূর্তির চার পাশে তওয়াফ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ﴾ [المائ‍دة: ٧٢]

“নিশ্চয় যে আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশিদার স্থির করে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। আর অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই।” [সূরা আল-মায়েদা: ৭২]

অন্যত্র তিনি বলেন,

﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱفۡتَرَىٰٓ إِثۡمًا عَظِيمًا ٤٨ ﴾ [النساء: ٤٨] 

“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না, যে লোক তার সাথে কাউকে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে লোক আল্লাহর সাথে অংশিদার সাব্যস্ত করল, সে মারাত্মক অপবাদ আরোপ করল।” [সূরা আন-নিসা: ৪৮]

২. শির্কে আকবার বা বড় ধরনের শির্ক করা : যেমন, আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করা অথবা তার কোনো কাজ অস্বীকার করা। যেমন, সৃষ্টি করণ, মালিকানা, পরিকল্পনা করা অথবা আল্লাহ তা‘আলার গুণাগুণের কোনো একটিকে তার মাখলুকের সাথে সম্পৃক্ত করা। কিয়ামতের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা। শরী‘আত ও রিসালতে মিথ্যারোপ করা। আল্লাহ ও তার রাসূল এর আদেশ প্রত্যাখ্যান করা ও অহমিকা প্রদর্শন করা। দীনের জরুরী প্রমাণ্য বিষয়গুলো অস্বীকার করা। ‌আল্লাহ বলেন,

﴿وَإِذۡ قُلۡنَا لِلۡمَلَٰٓئِكَةِ ٱسۡجُدُواْ لِأٓدَمَ فَسَجَدُوٓاْ إِلَّآ إِبۡلِيسَ أَبَىٰ وَٱسۡتَكۡبَرَ وَكَانَ مِنَ ٱلۡكَٰفِرِينَ ٣٤ ﴾ [البقرة: ٣٤]

“এবং যখন আমরা আদমকে সাজদাহ করার জন্য ফিরিশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখন ইবলিস ব্যতীত সবাই সাজদাহ করল। সে নির্দেশ পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।” [সূরা আল-বাকারাহ: ৩৪]

অন্যত্র ‌আল্লাহ বলেন,

﴿وَإِذَا قِيلَ لَهُمۡ ءَامِنُواْ بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ قَالُواْ نُؤۡمِنُ بِمَآ أُنزِلَ عَلَيۡنَا وَيَكۡفُرُونَ بِمَا وَرَآءَهُۥ وَهُوَ ٱلۡحَقُّ مُصَدِّقٗا لِّمَا مَعَهُمۡۗ قُلۡ فَلِمَ تَقۡتُلُونَ أَنۢبِيَآءَ ٱللَّهِ مِن قَبۡلُ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ٩١ ﴾ [البقرة: ٩١]

“যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তার প্রতি ঈমান আনয়ন কর, তখন তারা বলে- যা আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে আমরা তাতে ঈমান আনয়ন করি এবং তাছাড়া যা রয়েছে তা তারা অস্বীকার করে, অথচ তাদের কাছে যা আছে এ গ্রন্থ তার সত্যতা প্রমাণ করে। তুমি বল যদি তোমরা মুমিন ছিলে তবে ইতোপূর্বে আল্লাহর নবীগণকে কেন হত্যা করেছিলে?” [সূরা আল-বাকারাহ: ৯১]

﴿وَمَن يَرۡتَدِدۡ مِنكُمۡ عَن دِينِهِۦ فَيَمُتۡ وَهُوَ كَافِرٞ فَأُوْلَٰٓئِكَ حَبِطَتۡ أَعۡمَٰلُهُمۡ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلنَّارِۖ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ﴾ [البقرة: ٢١٧]

“তোমাদের মধ্যে যে নিজের দীন থেকে ফিরে যায় এবং কাফির অবস্থাতেই তার মৃত্যু ঘটে, দুনিয়া-আখেরাত উভয় জগতেই তাদের কর্ম ব্যর্থ। তারা জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।” [সূরা আল-বাকারাহ: ২১৭]

৩. বড় ধরনের নিফাক: যেমন, বাহ্যিকভাবে ইসলাম প্রকাশ করা, অন্তরে অস্বীকৃতি ও কুফুরী গোপন করা। অথবা বাহ্যিকভাবে ইসলামের প্রতি মহব্বত প্রকাশ করা, অন্তরে ইসলামকে ঘৃণা করা, অপছন্দ করা, এর বিলুপ্তি কামনা করা অথবা বাহ্যিকভাবে মুসলিম মুজাহিদদের পরাজয় এবং শত্রুদের ষড়যন্ত্রের কারণে চিন্তিত হওয়া, আন্তরিকভাবে এ জন্য খুশি হওয়া অথবা বাহ্যিকভাবে দীনের কাজ করা, এর প্রতি আহ্বান জানানো, এ জন্য জিহাদ করা, কিন্তু ভিতরে ভিতরে এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা। মুসলিমদের বিপক্ষে গোয়েন্দাগিরী করা। মুসলিমদের সমূলে নিঃশেষ করার ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করা। আল্লাহ বলেন,

﴿وَإِذۡ يَقُولُ ٱلۡمُنَٰفِقُونَ وَٱلَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٞ مَّا وَعَدَنَا ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ إِلَّا غُرُورٗا ١٢ ﴾ [الاحزاب: ١٢] 

“এবং মুনাফিরা ও যাদের অন্তরে ব্যধি ছিল তারা বলছিল: আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল আমাদেরকে যে প্রতিশ্রতি দিয়েছিলেন তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না।” [সূরা আল-আহযাব: ১২]

অন্যত্র তিনি বলেন,

﴿إِنَّ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ يُخَٰدِعُونَ ٱللَّهَ وَهُوَ خَٰدِعُهُمۡ﴾ [النساء: ١٤٢]

“অবশ্যই মুনাফিকরা প্রতারণা করেছে আল্লাহর সাথে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে।” [সূরা আন-নিসা: ১৪২] অন্যত্র তিনি বলেন,

﴿إِنَّ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ فِي ٱلدَّرۡكِ ٱلۡأَسۡفَلِ مِنَ ٱلنَّارِ وَلَن تَجِدَ لَهُمۡ نَصِيرًا ١٤٥ ﴾ [النساء: ١٤٥]

“নিঃসন্দেহে মুনাফিকরা থাকবে জাহান্নামের সর্ব নিম্ন স্তরে। আর তুমি তাদের জন্য কোনো সাহায্যকারী কখনও পাবে না।” [সূরা আন-নিসা: ১৪৫]

৪. আল্লাহ তা‘আলা এবং তার বান্দার মাঝখানে মধ্যস্থতাকারী সাব্যস্ত করা: আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে তারা ডাকে তাদের কাছে শাফা‘আত বা সুপারিশ প্রার্থনা করা অথবা তাদের ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা অথবা এমন সব জিনিসের ব্যাপারে তাদের কল্যাণের আশা রাখা, তাদের অনিষ্টকে ভয় পাওয়া- যার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা রাখেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَيَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمۡ وَلَا يَنفَعُهُمۡ وَيَقُولُونَ هَٰٓؤُلَآءِ شُفَعَٰٓؤُنَا عِندَ ٱللَّهِۚ قُلۡ أَتُنَبِّ‍ُٔونَ ٱللَّهَ بِمَا لَا يَعۡلَمُ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَلَا فِي ٱلۡأَرۡضِۚ سُبۡحَٰنَهُۥ وَتَعَٰلَىٰ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ١٨ ﴾ [يونس: ١٨]

“আর তারা উপাসনা করে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কিছুর, যা না তাদের কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারে, না লাভ আর তারা বলে এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী। তুমি বলে দাও, তোমরা কি আল্লাহকে এমন বিষয়ের সংবাদ দিচ্ছ যা তিনি অবগত নন, না আকাশসমূহে আর না যমীনে? তিনি পবিত্র ও তারা যা শির্ক করে তা থেকে অনেক উর্ধ্বে।” [সূরা ইউনূস: ১৮] অন্যত্র আল্লাহ বলেন,

﴿وَمَنۡ أَضَلُّ مِمَّن يَدۡعُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَن لَّا يَسۡتَجِيبُ لَهُۥٓ إِلَىٰ يَوۡمِ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَهُمۡ عَن دُعَآئِهِمۡ غَٰفِلُونَ ٥ وَإِذَا حُشِرَ ٱلنَّاسُ كَانُواْ لَهُمۡ أَعۡدَآءٗ وَكَانُواْ بِعِبَادَتِهِمۡ كَٰفِرِينَ ٦ ﴾ [الاحقاف: ٥،  ٦]

“সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত আর কে যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে যা কিয়ামত পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দিবে না? এবং এগুলো তাদের প্রার্থনা সম্বন্ধেও অবহিত নয়। যখন মানুষকে হাশরের ময়দানে একত্রিত করা হবে, তখন তারা তাদের শত্রু হয়ে দাঁড়াবে এবং তাদের ইবাদত করা অস্বীকার করবে।” [সূরা আল-আহকাফ: ৫-৬]

৫. মুশরিকদের কাফির না বলা: অথবা তাদের কুফুরীর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা অথবা তাদের ধর্মকে বৈধ স্বীকৃতি প্রদান করা বা তাদের ধর্মকে সম্মান করা। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাদের কুফুরীর চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন এবং তাদের সাথে শত্রুতা ও সর্ম্পক ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন- যেহেতু তাদের ভিতর শির্ক, কুফর ও স্পষ্ট গোমরাহী বিদ্যমান। আল্লাহ বলেন,

﴿لَّا يَتَّخِذِ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلۡكَٰفِرِينَ أَوۡلِيَآءَ مِن دُونِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَۖ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ فَلَيۡسَ مِنَ ٱللَّهِ فِي شَيۡءٍ إِلَّآ أَن تَتَّقُواْ مِنۡهُمۡ تُقَىٰةٗۗ﴾ [ال عمران: ٢٨]

“মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোনো কাফিরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। তবে যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোনো অনিষ্টের আশঙ্কা কর, তবে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে।” [সূরা আলে ইমরান: ২৮] অন্যত্র তিনি বলেন,

﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَكۡفُرُونَ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦ وَيُرِيدُونَ أَن يُفَرِّقُواْ بَيۡنَ ٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦ وَيَقُولُونَ نُؤۡمِنُ بِبَعۡضٖ وَنَكۡفُرُ بِبَعۡضٖ وَيُرِيدُونَ أَن يَتَّخِذُواْ بَيۡنَ ذَٰلِكَ سَبِيلًا ١٥٠ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡكَٰفِرُونَ حَقّٗاۚ وَأَعۡتَدۡنَا لِلۡكَٰفِرِينَ عَذَابٗا مُّهِينٗا ١٥١ ﴾ [النساء: ١٥٠،  ١٥١]

“নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তার রাসূল এর প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে, তদুপরি আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমানে তারতম্য করতে চায়, আর বলে যে, আমরা কতকের ওপর ঈমান আনয়ন করি, কিন্তু কতককে অস্বীকার করি এবং এরই মধ্যবর্তী কোনো পথ অবলম্বন করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে এরাই সত্য প্রত্যাখ্যানকারী। আর যারা সত্য প্রত্যাখ্যানকারী তাদের জন্য আমরা তৈরি করে রেখেছি অপমানজনক আযাব।” [সূরা আন-নিসা: ১৫০-১৫১]

সুতরাং যে তাদের কুফুরীর স্বীকৃতি দিবে না অথবা তাতে সন্দেহ পোষণ করবে অথবা তাদের ধর্মের বৈধতার স্বীকৃতি দিবে, সে বাস্তবে আল্লাহর মীমাংসিত বিষয়কে আল্লাহর ওপর নিক্ষেপ করল এবং রাসূল ও কুরআনে মিথ্যারোপ করল। আর এটাই মুসলিমদের সর্বসম্মত মতে কুফুরী।

৬. নিম্নোক্ত বিশ্বাস পোষণ করা : আল্লাহ তা‘আলার দীন ও তার রসূল সা. এর শিক্ষার তুলনায় অন্যদের ধর্ম ও শিক্ষা সয়ংসম্পূর্ণ অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিচারের তুলনায় অন্যদের বিচার ইনসাফপূর্ণ অথবা ইসলামী জীবন ব্যবস্থা বর্তমানে যুগোপযোগী নয় অথবা দীন ইসলাম নির্দিষ্ট ইবাদত উদযাপনের ভিতর সীমাবদ্ধ, মানুষের পার্থিব জীবনের বিভিন্ন শাখা প্রশাখার সাথে এর কোনো সর্ম্পক নেই অথবা যে কোনো ব্যক্তির আল্লাহর বিধানের বিরোধিতা করার নৈতিক অধিকার রয়েছে মনে করা অথবা কুফুরী ও মানব রচিত আইন-কানুনের মাধ্যমে বিচার করা জায়েয মনে করা। যদিও এ কাজগুলো সম্পাদনকারী ও বাস্তবায়নকারী ব্যক্তি, শরী‘আতে মুহাম্মাদীর ওপর আমল করে এবং এ দীন স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং বাকী সব দীন ও শিক্ষার ওপর এর প্রাধান্য রয়েছে বলে স্বীকার করে। আল্লাহ বলেন,

﴿أَلَمۡ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ يَزۡعُمُونَ أَنَّهُمۡ ءَامَنُواْ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبۡلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوٓاْ إِلَى ٱلطَّٰغُوتِ وَقَدۡ أُمِرُوٓاْ أَن يَكۡفُرُواْ بِهِۦۖ وَيُرِيدُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَن يُضِلَّهُمۡ ضَلَٰلَۢا بَعِيدٗا ٦٠ ﴾ [النساء: ٦٠]

“আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যে, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতিও। তারা বিরোধীয় বিষয়কে তাগুতের দিকে নিয়ে যেতে চায়। অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে যেন তারা তাগুতকে অস্বীকার করে। আর শয়তান তো তাদেরকে গভীরভাবে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়।” [সূরা আন-নিসা: ৬০]

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,

﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥ ﴾ [النساء: ٦٥]

“অতএব তোমার রবের শপথ! তারা কখনো ঈমানদার হতে পারবে না, যে পর্যন্ত তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক বলে মেনে না নেয়। তৎপর তুমি যে বিচার করবে তা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণ না করে এবং তা সন্তুষ্ট চিত্তে কবুল করে।” [সূরা আন-নিসা: ৬৫]

৭. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা তার আনীত বিধানের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা: বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি উক্ত বিধান পালন করুক বা না করুক উভয় অবস্থাতেই সমান অপরাধে অপরাধী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ كَرِهُواْ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأَحۡبَطَ أَعۡمَٰلَهُمۡ ٩ ﴾ [محمد: ٩]

“এটা এজন্য যে, আল্লাহ যা নাযেল করেছেন তারা তা পছন্দ করে না, অতএব আল্লাহ তাদের কর্ম ব্যর্থ করে দিবেন।” [সূরা মুহাম্মাদ: ৯]

আর জানা কথা যে, ঈমানের বিপরীত কুফুরীই আমল নস্যাৎ করে দেয়। এখানে তারা আল্লাহ তা‘আলার বিধানকে অপছন্দ করে কুফুরী করেছে, তাই তাদের আমল আল্লাহ তা‘আলা বাতিল করে দিয়েছেন।

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,

﴿وَلَوۡ أَشۡرَكُواْ لَحَبِطَ عَنۡهُم مَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ﴾ [الانعام: ٨٨]

“যদি তারা শির্ক করতো, তবে তাদের কাজকর্ম তাদের জন্য ব্যর্থ হয়ে যেত।” [সূরা আল-আন‘আম: ৮৮]

৮. উপহাস করা : আল্লাহ, রসূল, কুরআন, শরী‘আত, শরী‘আতের কোনো নিদর্শন, সাওয়াব, শাস্তি অথবা দীনের ওপর অবিচল ও দীনের প্রতি আহ্বানকারীদের সাথে (দীনের ওপর অবিচল থাকার কারণে, দীনের প্রতি আহ্বান জানানোর কারণে) উপহাস করা। আল্লাহ বলেন,

﴿قُلۡ أَبِٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ وَرَسُولِهِۦ كُنتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُونَ ٦٥ لَا تَعۡتَذِرُواْ قَدۡ كَفَرۡتُم بَعۡدَ إِيمَٰنِكُمۡۚ﴾ [التوبة: ٦٥،  ٦٦]

“আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তার হুকুম-আহকামের সাথে এবং তার রাসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? ওযর পেশ করো না, ঈমান গ্রহণের পরও তোমরা কাফির হয়ে গেছ।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৬৫-৬৬]

৯. কাফির-মুশরিকদের সাথে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব স্থাপন করা : মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা, তাদের মহব্বত করা এবং মুসলিমদের বিপরীত তাদের সাহায্য করা। আল্লাহ বলেন,

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَتَّخِذُواْ ٱلۡيَهُودَ وَٱلنَّصَٰرَىٰٓ أَوۡلِيَآءَۘ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمۡ فَإِنَّهُۥ مِنۡهُمۡۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٥١ ﴾ [المائ‍دة: ٥١]

“হে মুমিনগণ, তোমরা ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ যালিমদেরকে সুপথ প্রদর্শন করেন না।” [সূরা আল-মায়েদা: ৫১]

১০. জাদু : যে এ কাজ করল বা এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করল সে মূলত কুফুরী করল। আল্লাহ বলেন,

﴿وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنۡ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَآ إِنَّمَا نَحۡنُ فِتۡنَةٞ فَلَا تَكۡفُرۡۖ ﴾ [البقرة: ١٠٢]

“তারা উভয়ে একথা না বলে কাউকে বলে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরিক্ষার জন্য, কাজেই তুমি কাফির হয়ো না।” [সূরা আল-বাকারাহ: ১০২]

১১. আল্লাহর শরী‘আত এবং তার দিক-নির্দেশনা হতে অন্তর-কর্ণ সহ পৃষ্ঠ প্রদর্শন করা: যদিও সে শরী‘আতকে সত্যারোপ কিংবা মিথ্যারোপ কোনোটাই করে না, এর সাথে বন্ধুত্ব কিংবা শত্রুতাও পোষণ করে না; কিন্তু সে কোনোভাবেই এর প্রতি কর্ণপাত করে না। আল্লাহ বলেন,

﴿وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّن ذُكِّرَ بِ‍َٔايَٰتِ رَبِّهِۦ ثُمَّ أَعۡرَضَ عَنۡهَآۚ إِنَّا مِنَ ٱلۡمُجۡرِمِينَ مُنتَقِمُونَ ٢٢ ﴾ [السجدة: ٢٢]

“যে ব্যক্তিকে তার রবের আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দান করা হয় অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে? আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দিব।” [সূরা আস-সাজদাহ: ২২]

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,

﴿وَٱلَّذِينَ كَفَرُواْ عَمَّآ أُنذِرُواْ مُعۡرِضُونَ﴾ [الاحقاف: ٣]

“আর কাফিররা যে বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।” [সূরা আল-আহকাফ: ৩]

উল্লিখিত সমস্ত বিষয় ঈমান বিনষ্টকারী। উপহাস, ঠাট্টা, ইচ্ছা কিংবা ভয় যেভাবেই করুক সর্বাবস্থায় তা কুফুরী। তবে জবরদস্তিমুলক কাউকে কুফরী করতে বাধ্য করা হলে তার বিষয়টি আলাদা। আল্লাহ বলেন,

﴿إِلَّا مَنۡ أُكۡرِهَ وَقَلۡبُهُۥ مُطۡمَئِنُّۢ بِٱلۡإِيمَٰنِ﴾ [النحل: ١٠٦]

“যার ওপর জবর দস্তি করা হয় এবং তার অন্তর ঈমানের ওপর অটল থাকে সে ব্যতীত।” [সূরা আন-নাহল: ১০৬]

চাপ প্রয়োগকৃত ব্যক্তির কুফুরী কথা বা কাজের দ্বারা ঈমান না হারোনোর শর্ত হলো তার অন্তর ঈমানের ব্যাপারে আস্থাশীল থাকতে হবে।

সমাপ্ত

সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা: প্রফেসর ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

Share on