bn বাংলা
বাংলা বাংলা
English English
عربي عربي


+8801575-547999
সকাল ৯টা হতে রাত ১০টা
Community Welfare Initiative

কাফিরদেরকে ইসলামের প্রতি দাওয়াত না দিলে কি মুসলিমগণ অপরাধী হবে?

প্রশ্ন: পিস টিভি চ্যানেলের একাধিক বক্তা ও দা‘য়ী আমাদের উদ্দেশ্যে বলেন, যে সব অমুসলিমের সাথে তুমি উঠাবসা কর এবং যাদেরকে তুমি চেন, তাদেরকে যদি তুমি ইসলামের দিকে দাওয়াত না দাও, তারা কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে তোমার বিপক্ষে অভিযোগ করবে যে, তুমি তাদের ইসলামের প্রতি দাওয়াত দাও নি। এ কথাটি কতটুকু সঠিক? যদি সঠিক হয়, তাহলে এর প্রমাণ কী? যাদের সাথে আমার রাস্তা-ঘাটে দেখা-সাক্ষাত হয় তাদের সবার ক্ষেত্রে এ কথাটি প্রযোজ্য, নাকি যাদের আমি ভালোভাবে চিনি শুধু তাদের সাথে বিষয়টি নির্দিষ্ট? আমাদের সহকর্মী, প্রতিবেশী এবং রাস্তায় চলার সময় যাদের সাথে দেখা হয়, তারা সবাই কি এ সব লোকদের আওতায় পড়ে, যাদের ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়া জরুরি ও ওয়াজিব?

উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ
এক- মনে রাখ, আল্লাহর দিকে মানুষকে দাওয়াত দেওয়া সার্বিক দিক বিবেচনায় ওয়াজিব ও ফরযে কেফায়া। যদি কোনো একজন দা‘ঈ, আলেম ও তালেবে ইলম দাওয়াতের এ মহান দায়িত্ব পালন করে, তবে অন্য মুসলিমগণ দায় মুক্ত হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَا كَانَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لِيَنفِرُواْ كَآفَّةٗۚ فَلَوۡلَا نَفَرَ مِن كُلِّ فِرۡقَةٖ مِّنۡهُمۡ طَآئِفَةٞ لِّيَتَفَقَّهُواْ فِي ٱلدِّينِ وَلِيُنذِرُواْ قَوۡمَهُمۡ إِذَا رَجَعُوٓاْ إِلَيۡهِمۡ لَعَلَّهُمۡ يَحۡذَرُونَ ١٢٢﴾ [التوبة: ١٢٢] 

“আর মুমিনদের সকলের একসাথে অভিযানে বের হওয়া সংগত নয়। অতঃপর তাদের প্রত্যেক দলের এক অংশ কেন বের হয় না, যাতে তারা দীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারে এবং তাদের সম্প্রদায়কে ভীতিপ্রদর্শন করতে পারে, যখন তারা তাদের কাছে ফিরে আসবে, যাতে তারা সতর্ক হয়।”[1]

তবে কখনো কখনো এ দাওয়াতের দায়িত্বটি ব্যক্তির ওপর বর্তায়। যেমন, কোনো এলাকায় একজন লোকই আছে সেখানে আর কোনো দা‘ঈ নাই, (অন্যরা সাধারণ মানুষ) অথবা অন্য কোনো দা‘ঈ থাকলেও এখানে একটি সমস্যা তৈরি হয়েছে যা সে লোক ছাড়া আর কারো দ্বারা বন্ধ হওয়া সম্ভব নয় অথবা কেবল যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করে তার আহ্বান ছাড়া সে সমস্যাটি সমাধান করা সম্ভব নয়, এমতাবস্থায় সে ব্যক্তির উপর দাওয়াতের কাজ করা সুনির্দিষ্ট হয়ে পড়ে।

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেওয়া প্রতিটি মুসলিমের ওপর ফরয। তবে এটি ফরযে কিফায়াহ; ফরযে আইন নয়। আর ফরযে আইন বা নির্দিষ্ট ব্যক্তির ওপর দাওয়াত দেওয়া তখন ওয়াজিব হয় যখন লোকটি দাওয়াত দিতে সক্ষম এবং সে ছাড়া আর কেউ দাওয়াত না দেয়। এটিই হলো, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে বাধা দেওয়া, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দীন নিয়ে এসেছেন তা মানুষের নিকট পৌঁছে দেওয়া, আল্লাহর রাহে জিহাদ করা এবং ঈমান ও কুরআন শেখা।[2]

আল্লাহর দীনের প্রতি মানুষকে দাওয়াত দেওয়া ফরযে কিফায়া হওয়ার প্রমাণ:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلۡخَيۡرِ وَيَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٠٤﴾ [ال عمران: ١٠٤]

“আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল যেন থাকে যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দিবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে; আর তারাই সফলকাম।”[3]

শাইখ আবদুর রহমান আস-সা‘দী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এটি মুমিনদের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে বিশেষ নির্দেশ যাতে তাদের মধ্যে একটি জামাত এমন হয় যারা আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান করার কাজে লেগে থাকবে এবং মানুষকে আল্লাহর দীনের পথ দেখাবে। আলেম-ওলামাদের পক্ষ থেকে মানুষকে দীন শেখানো, ওয়াজ নসীহত করা ও বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ইসলামে প্রবেশ করার আহ্বান করা এবং দীন থেকে দূরে সরে যাওয়া লোকদের দীনের ওপর অবিচল থাকার নছিহত করা, মানুষের অবস্থা সম্পর্কে খোজ-খবর নেওয়া, মানুষকে ইসলামী শরী‘আতের বিধান যেমন সালাত আদায়, যাকাত প্রদান, রমযানের সাওম পালন করা ও হজ করা ইত্যাদি বিধান পালনে বাধ্য করা, ওজন কম-বেশ করে কিনা তা তদারকি করা, বাজারের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা এবং মানুষকে ধোঁকা দেওয়া ও মানুষের সাথে মিথ্যা প্রতারণা করা থেকে বিরত রাখা ইত্যাদি সবই ফরযে কিফায়াহ। যেমনটি আল্লাহর তা‘আলা বাণী-﴿وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ﴾ إلخ উল্লিখিত আয়াতটি প্রমাণ করে। অর্থাৎ তোমাদের থেকে একটি জামা‘আত এমন হওয়া চাই যাদের দ্বারা উল্লিখিত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে মূল লক্ষ্য হাসিল হয়। আর এ কথা সু-স্পষ্ট যে, কোনো বিষয়ে আদেশ দেওয়া দ্বারা বিষয়টি হাসিল হতে প্রাসঙ্গিক যা কিছু প্রয়োজন তার প্রতিও আদেশ হয়ে যায়। ফলে বিষয়টির হাসিল যেসব কর্মের ওপর মওকূফ থাকে তাও নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত।[4]

দুই- যারা বলে, কাফিররা মারা যাওয়ার পর সে আল্লাহর সামনে তোমার বিপক্ষে অভিযোগ করবে, কথাটি অনির্ভরযোগ্য; এর ওপর কোনো দলীল-প্রমাণ নেই। যেসব কাফিরদের দাওয়াত দেওয়া হয়, তাদের কয়েক প্রকারে ভাগ করা যায়।

প্রথম প্রকার:  এক ধরনের কাফির আছে, যারা এমন কোনো দেশে বসবাস করে, তার অবস্থান সম্পর্কে কেউ জানে না অথবা সহজে তার কাছে যাওয়া কোনো মুসলিমের জন্য সম্ভব নয়। এ ধরনের কোনো কাফির মারা গেলে তাদের কুফুরীর দায়-দায়িত্ব বা গুনাহ কোনো মুসলিমের ওপর বর্তাবে না। কারণ, মুসলিমরা দুনিয়া জুড়েই বিদ্যমান। যেমন, যারা দাওয়াত দেয়, তাদের অনেকেই বলে, আজকে আফ্রিকার জঙ্গলে একজন মূর্তিপূজক মারা গেছে, তার দায়-দায়িত্ব মুসলিমদেরই নিতে হবে। এ ধরনের কথা বাতিল, ইসলামী শরী‘আতের সাথে এ ধরনের কথার কোনো সম্পর্ক নেই। অন্যথায় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীরাও অপরাধী হওয়া সাব্যস্ত হয়। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতের যুগে অনেক মানুষ হিন্দুস্থান, চীন ও আফ্রিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন আনাচে-কানাচে মারা গেছেন, তারা কি কিয়ামতের দিন মুসলিমদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবে?! আল্লাহ তা‘আলা কি তাদের এমন দায়িত্ব দিয়েছেন যা পালন করতে তারা অক্ষম? তাদের থেকে কোনো প্রকার ত্রুটি না পাওয়া সত্ত্বেও তাদের দোষী করবেন?! রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর দীন মানুষের নিকট পৌছিয়ে দেওয়ার জন্য তার সাধ্য মতো প্রাণ-পণ চেষ্টা চালিয়ে যান, তিনি বিভিন্ন দেশের রাজা-বাদশাহ ও জনগণের নিকট ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চিঠি লিখে পাঠান এবং তিনি তার সাধ্য মতো বিভিন্ন দা‘ঈদেরকে বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করেন। এখানে যদি মুসলিমদের কারো গুনাহ হয় তবে সে মুসলিম লোকটি গুনাহগার হবে, যেকোনো কাফির লোককে কাফির অবস্থায় দেখেও তাকে ইসলামের দাওয়াত দেয়নি অথবা যে কাফিরটির অবস্থান সম্পর্কে জানত এবং তার কাছে যাওয়ার ক্ষমতাও তার ছিল, কিন্তু সে তাকে দাওয়াত দিতে যায়নি।

দ্বিতীয় প্রকার: কতক কাফির এমন আছে, যারা ইসলামের দাওয়াত সম্পর্কে শুনেছে এবং জেনেছে। তারা এ কথা জানে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্বশেষ নবী এবং তার আনিত দীনের ওপর ঈমান আনা ও ইসলামে প্রবেশ করা ওয়াজিব। এতটুকু জানা ও শোনা ঈমান আনার জন্য যথেষ্ট। সুতরাং এ ধরনের কাফিরদের সাথে যখন দেখা হবে, তখনই তাদের দাওয়াত ইসলামে প্রবেশ করার জন্য দাওয়াত দেওয়া ও তাদের তাদের নিকট দীন পৌঁছানো ওয়াজিব নয়। এ ধরনের কাফিরদের যদি দাওয়াত দেওয়া না হয়, তাহলে তারা গুনাহগার হবে না। কারণ, তাদের নিকট দীনের দাওয়াত পৌঁছেছে এবং তাদের ওপর হুজ্জত তথা দলীল-প্রমাণাদি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদের নিকট দীনের দাওয়াত পৌছিয়ে দেন এবং তাদেরকে বিভিন্ন মজলিশ ও অনুষ্ঠানে ইসলামে প্রবেশ করার নির্দেশ দেন। তারপর যখন তাদের সাথে দেখা হত, প্রতিবারই কোনো কথা বলার পূর্বেই তাদের ইসলাম গ্রহণ করার দাওয়াত দিতেন না। সুহাইল ইবন ‘আমরের সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদাইবিয়ার সন্ধি লিপিবদ্ধ করেন। কিন্তু তখন তাকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিয়েছেন এ ধরনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহূদীদের সাথে বেচা-কেনা করেছেন, কিন্তু তখন তাদের ইসলামের দাওয়াত দেননি।

শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ. বলেন, যখন কোনো গ্রাম ও শহর হয় এবং সেখানে এমন কোনো ব্যক্তি পাওয়া যায় যে কাফিদেরকে ইসলামে প্রবেশ করার দাওয়াত দেয় এবং তাদের দীনের দাওয়াত পৌছিয়ে দেয়। তাহলে তা যথেষ্ট হবে। আর বাকীদের ওপর তাদের দাওয়াত দেওয়া সুন্নত হিসেবে পরিগণিত হবে। কারণ, অপরের মাধ্যমে তাদের বিপক্ষে দলীল কায়েম হয়েছে এবং আল্লাহর নির্দেশ অপরের দ্বারা বাস্তবায়িত হয়েছে।[5]

সুতরাং যারা বলে, যদি কাফিরকে দাওয়াত দেওয়া না হয়, তাহলে সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে মুসলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবে, তাদের কথা সঠিক নয়। কারণ, কিয়ামতের দিন কাফির বিবাদী হওয়ার জন্য তাকে অবশ্যই একজন মুসলিমের বিপক্ষে দায়িত্বে অবহেলা করার প্রমাণ দেখাতে হবে এবং আল্লাহর সামনে নিজেকে নির্দোষ ও অপারগ প্রমাণ করতে হবে। আর এটি কখনোই সত্য প্রমাণিত হবে না। কারণ, একজন কাফিরের ঈমান আনার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জানা এবং তার কথা শোনাই যথেষ্ট। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী ব্যাপক তাতে তিনি শুধু শ্রবণ করার ওপর ঈমান আনাকে ওয়াজিব করে দেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَا يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ يَهُودِيٌّ وَلَا نَصْرَانِيٌّ ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ إِلَّا كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّار»

“যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তার শপথ, ইয়াহূদী ও নাসারাদের মধ্যে যারাই আমার কথা শুনবে, তারপর আমি যা নিয়ে এসেছি তার উপর ঈমানা না এনে মারা যাবে সে-ই জাহান্নামের অধিবাসী হবে।”[6]

সুতরাং যে সব কাফিরের নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে তারপরও সে কুফরীর ওপর অটল থাকে তাহলে সে অবশ্যই জাহান্নামী হবে। নিঃসন্দেহে বলা যায়, বর্তমান উন্মুক্ত বিশ্বে অধিকাংশ কাফির যারা মুসলিমদের সাথে বসবাস করে অথবা মুসলিমরা তাদের সাথে বসবাস করে, তাদের সবার নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে গেছে। ফতোয়া সংক্রান্ত সৌদী স্থায়ী কমিটির আলেমগণ বলেন, “যে ব্যক্তি এমন দেশে বসবাস করে, যেখানে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়া হয়, তারপরও সে ঈমান আনে না এবং সত্যের অনুসন্ধান করে না, সে ব্যক্তি তাদের মতো হবে, যাদের ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়ার পরও তারা ইসলাম কবুল করেনি এবং কুফুরীর ওপর অবিচল থাকে। আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসের ব্যাপকতা এর জ্বলন্ত প্রমাণ।[7]

তবে কাফিরদেরকে ইসলাম বিষয়ে বুঝানো, তাদের সামনে ইসলামের পরিচয় তুলে ধরা, তাদের নিকট ইসলামকে ভালোভাবে পেশ করার চেষ্টা করা দ্বারা কাফিরদের বিরুদ্ধে পরিপূর্ণ প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করা করা হয় এবং আল্লাহর নিকট তাদের অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

তৃতীয় প্রকার: ঐ সব কাফির যাদের নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে নি এবং কেউ তাকে ইসলামের দিকে ডাকেন নি অথবা কোনো মুসলিমের নিকট ইসলাম সম্পর্কে জানতে আসছে তখন তার ওপর ওয়াজিব হল, সে তার সাধ্য অনুযায়ী তাকে ইসলামের দাওয়াত দেবে, আল্লাহর দীন শেখাবে এবং ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান দেবে। যদি কোনো মুসলিম এ দায়িত্ব পালন না করে তাহলে সে অবশ্যই বড় গুনাহগার হবে। আর এক্ষেত্রেও কাফিরের জন্য এমন কোনো প্রমাণ নেই যে, সে আল্লাহর দরবারে ঐ মুসলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবে। তবে সে আল্লাহর দরবারে ওযর পেশ করতে পারবে যে, তার নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেনি। তখন কিয়ামতের দিন তাকে পরীক্ষা নেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি জানতে পারে যে, লোকটির নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেনি তার ওপর ওয়াজিব হলো, সে লোকটির নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোর জন্য যথা সম্ভব চেষ্টা করবে। যদি তার নিকট পৌছতে সক্ষম না হয়, তাহলে যে দা‘ঈর দ্বারা সম্ভব হয় তাকে তার নিকট পাঠাবে।

সময় ও যুগের পরিবর্তনের সাথে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার পদ্ধতিও বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। কখনো টেলিফোন ও মোবাইলের দ্বারা দাওয়াত দেওয়া যায় আবার কখনো চিঠির মাধ্যমে দাওয়াত দেওয়া যায়। যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর যুগের বাদশাহদের চিঠির মাধ্যমে দাওয়াত দেন। আর যদি মুসলিমের ক্ষমতার মধ্যে না থাকে, তবে তাকে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে না। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা দুনিয়ার সব জায়গায় দা‘ঈ প্রেরণ করেন নি এবং দুনিয়ার সব মানুষের নিকট তিনি চিঠি পৌছান নি। কারণ, সারা দুনিয়াতে দাওয়াত দেওয়ার মত ক্ষমতাধর কোনো ব্যক্তি তখন ছিল না এবং সবার নিকট চিঠি দেওয়াও সম্ভব নয়।

শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ. বলেন, এ সব ক্ষেত্রে দাওয়াত দেওয়া কখনো ফরযে আইন হয়ে থাকে, যখন লোকটি এমন স্থানে হয়, যেখানে সে ছাড়া আর কেউ দাওয়াতি কাজের দায়িত্ব কেউ আদায় করতে পারবে না। যেমন, সৎ কাজের আদেশ দেওয়া ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করার বিধান। কারণ, সৎ কাজের আদেশ দেওয়া ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা কখনো ফরযে আইন, আবার কখনো ফরযে কিফায়াহ হয়ে থাকে। যখন তুমি এমন স্থানে থাকবে, যেখানে তুমি ছাড়া এমন কোনো ব্যক্তি নেই যে মানুষকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর দীনের দাওয়াত দেবে, তখন তোমার ওপরই ফরয হল, তুমি এ দায়িত্ব পালন করবে। আর যদি এমন কোনো ব্যক্তি পাওয়া যায় যে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করবে, তাহলে তা তোমার জন্য সুন্নতের পর্যায়ে থাকবে। তারপরও যদি তুমি তার কাছে দাওয়াত নিয়ে ছুটে যাও, তাহলে তা হবে ভালো কাজের আগ্রহী ও আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীর প্রতি প্রতিযোগী।[8]

আল্লাহর অবশিষ্ট জমিন ও অন্যান্য মানব জাতিদের বিষয়ে শাইখ রহ. আরও বলেন, আলেমদের ও ক্ষমতাশীলদের যোগ্যতা ও ক্ষমতা অনুযায়ী তাদের নিকট আল্লাহর দীন পৌঁছানো ওয়াজিব এবং ফরযে আইন। এ কথা দ্বারা একটি বিষয় স্পষ্ট হয়, আল্লাহর দীনের দাওয়াত দেওয়ার বিষয়টি ফরযে আইন বা ফরযে কেফায়াহ হওয়া একটি আপেক্ষিক বিষয়। সময় স্থান কাল ও পাত্র বিশেষ এটি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। কখনো কখনো কোনো সম্প্রদায় বা ব্যক্তিকে দাওয়াত দেওয়া ফরযে আইন হয়, আবার কখনো কখনো তাদের এলাকায় তাদের দাওয়াত দেওয়ার মত কোনো লোক থাকে তখন দাওয়াত দেওয়া সুন্নত হয়।

আর যারা ক্ষমতাশীল এবং যাদের ক্ষমতা ব্যাপক, তাদের দায়িত্ব বেশি। তাদের ওপর ওয়াজিব হলো, তারা দুনিয়ার আনাচে কানাচে তাদের সাধ্য অনুযায়ী দীনের দাওয়াত পৌঁছে দিবে। দাওয়াত দেওয়ার জন্য সব ধরনের উপকরণ অবলম্বন করবে এবং বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নিকট তাদের ভাষায় ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেবে। যাতে প্রতিটি মানুষের নিকট তারা যে ভাষায় কথা বলে, সে ভাষায় দীনের দাওয়াত পৌঁছে যায়। কারণ, বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি-রেডিও, টেলিভিশন, পেপার পত্রিকা ইত্যাদির মাধ্যমে দীনের দাওয়াত পৌঁছানো অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক সহজ।[9]

আর যে ব্যক্তি কোনো প্রচার মাধ্যম আবিষ্কার করতে সক্ষম অথবা কোনো ওয়েবসাইট খুলতে সক্ষম তাদের ওপর ওয়াজিব হলো, দুনিয়ার যে অংশে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে নি তাদের দাওয়াত পৌঁছানোর জন্য এ ধরনের প্রচার মাধ্যম বা ওয়েব সাইট খুলে তাদের নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রকার অবহেলা, কার্পণ্য ও অলসতা গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা, ক্ষমতাশীল ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ওপর অধিক ওয়াজিব।

সাউদী ফাতাওয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির আলেমগণ বলেন, তবে যারা অমুসলিমদের দেশে বসবাস করে, যারা মুহাম্মদ সা. সম্পর্কে কোনো সংবাদ পায় নি এবং কুরআন হাদিস সম্পর্কে তারা কিছু জানে না, এ ধরনের মানুষ যদি দুনিয়াতে থাকে, তাদের বিধান- ফাতরাতের যুগের মানুষের বিধান। (ফাতরাত বলতে দুই নবীর সময়কালের মাঝখানের সময়টিকে বুঝানো হয়েছে, তাদের বিধান হলো, তাদেরকে হাশরের মাঠে পরীক্ষা করা হবে।) আলেমদের ওপর ওয়াজিব হল, তাদের নিকট ইসলামের দাওয়াত সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত আকারে পৌঁছে দেওয়া, যাতে তাদের বিপক্ষে দলীল কায়েম করা যায় এবং আল্লাহর দরবারে দায় মুক্ত হতে পারে। অন্যথায় কিয়ামতের দিন তাদের সাথে ঐ ধরণের ব্যবহার করা হবে যেমন ব্যবহার করা হয়ে থাকে যারা মুকাল্লাফ নয় তাদের সাথে। যেমন, পাগল, ছোট বাচ্চা ইত্যাদির সাথে যে আচরণ করা হয়, তাদের সাথেও তাই করা হবে।[10]

শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায, শেখ আব্দুর রাযযাক আফীফী, দেখুন প্রশ্নোত্তর- (131777) এবং (26721) এবং (84308)

আল্লাহই ভালো জানেন।

সূত্র : موقع الإسلام سؤال وجواب

অনুবাদ: জাকেরউল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদনা: প্রফেসর ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া


[1] সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১২২।
[2] মাজমূ‘ ফাতাওয়া (১৫/১৬৬)।
[3] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৪।
[4] দেখুন: তাফসীর আস-সা‘দী, পৃ. ১৪২।
[5] দেখুন: শাইখ ইবন বায রাহিমাহুল্লাহর ফাতাওয়া (৩৩২/১)।
[6] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৩।
[7] দেখুন: ফাতাওয়ায়ে লাজনায়ে দায়েমাহ (১৪৮/২), শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায, শাইখ আব্দুর রায্যাক আফীফী।
[8] দেখুন: শাইখ ইবন বায রাহিমাহুল্লাহর ফাতাওয়া (৩৩১/১)
[9] দেখুন: ফাতাওয়া শাইখ ইবন বায (৩৩২/১)।
[10] দেখুন: ফাতাওয়ায়ে লাজনায়ে দায়েমাহ (১৫০/২)।

Share on