মসজিদের উপরে অথবা নিচে ভবন নির্মাণ করার বিধা
প্রশ্ন: আমার পিতা মৃত্যুর পূর্বে অসীয়ত করেছেন, যেন তার সম্পদের কিছু অংশ দ্বারা সদকায়ে জারিয়া হিসেবে একটি মসজিদ নির্মাণ করি। এভাবে যে, গ্রাউণ্ড ফ্লোরে মসজিদ থাকবে, তার উপরে থাকবে দাতব্য চিকিৎসালয়, কুরআন হিফয করার ইউনিট, ইসলামি পাঠাগার এবং দাতব্য চিকিৎসালয়ে আগত ভিজিটরদের জন্য থাকবে প্রাইভেট কার রাখার গ্যারেজ। অতএব, মসজিদের উপরে অথবা নিচে ভবন নির্মাণ করা কি বৈধ হবে? না অসীয়ত পরিবর্তন করে মসজিদ আলাদা নির্মাণ করা ও অন্যান্য চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানগুলো আলাদা নির্মাণ করা উত্তম?
উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ
প্রথমত: ভবনের নিচে অথবা উপরে মসজিদ থাকলে কোন অসুবিধা নেই, যদি শুরু থেকেই ভবন এভাবে নির্মাণ করা হয়।
“الموسوعة الفقهية” (12/295) গ্রন্থে রয়েছে, শাফে‘ঈ, মালেকী ও হানবলীগণ ভবনের নিচের অংশ বাদ দিয়ে উপরের অংশে মসজিদ নির্মাণ বা এর বিপরীত করা বৈধ বলেছেন। কারণ, দু’টি অংশই আলাদা ও স্বতন্ত্র। তাই একটি ওয়াকফ করে অপরটি ওয়াকফ না করা বৈধ।
লাজনা দায়েমার আলেমদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: আমি একটি বাড়ি এ নিয়তে নির্মাণ করেছি যে, তার নিচে হবে মসজিদ। এখন বাড়িটি পূর্ণ হয়েছে, নির্মাণ অবকাঠামোতেই কেবলা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। মসজিদ সংলগ্ন নির্দিষ্ট বাথরুম তৈরি করা হয়েছে এবং ফার্নিচার ইত্যাদির কাজও সমাপ্ত হয়েছে। রং ব্যতীত আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। মসজিদটি ইসলামি আকৃতির রূপ পরিগ্রহণ করেছে। আমি বাড়ি ও মসজিদটি গত পাঁচ বছর যাবত ওয়াকফ করে দিয়েছি, যতদিন এর উপকারিতা বিদ্যমান থাকবে, ততদিন এ ওয়াকফও কার্যকর থাকবে। কিন্তু কারো কাছ থেকে শোনেছি, বাড়ির নিচে মসজিদ নির্মাণ বৈধ নয়। বাড়ির নিচে মসজিদ নির্মাণের ব্যাপারে আপনাদের মতামত কি?
উল্লেখ্য যে, এ সময়ের মধ্যে তার আশপাশে ছোট ছোট অনেক মসজিদ গড়ে উঠেছে। উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন। আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন।
তারা উত্তর দিয়েছেন: ভিত্তি প্রস্তর থেকেই যদি এভাবে ভবন নির্মাণ করা হয় যে, নিচে থাকবে মসজিদ আর উপরে থাকবে বাড়ি, তবে তাতে কোনো অসুবিধে নেই। অথবা বাড়ির নিচে নতুন করে মসজিদ নির্মাণ করলেও কোনো সমস্যা নেই। হ্যাঁ, যদি মসজিদের উপরে নতুন করে বাড়ি নির্মাণ করা হয়, যা ইতোপূর্বে ছিল না, তবে তা বৈধ নয়। কারণ, মসজিদ ও মসজিদের উপরে যে শূন্য রয়েছে তাও মসজিদের অনুগামী। [ফতোয়া লাজনা দায়েমা (৫/২২০), দ্বিতীয় ভলিয়ম]
দ্বিতীয়ত: নিয়ম হচ্ছে অসীয়ত বাস্তবায়ন করা এবং অসীয়ত বাস্তবায়নে কোনো পাপ না হলে তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন না করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿فَمَنۢ بَدَّلَهُۥ بَعۡدَ مَا سَمِعَهُۥ فَإِنَّمَآ إِثۡمُهُۥ عَلَى ٱلَّذِينَ يُبَدِّلُونَهُۥٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٞ ١٨١﴾ [البقرة: ١٨١]
“অতএব, যে তা শ্রবণ করার পর পরিবর্তন করবে, তবে এর পাপ তাদের হবে, যারা তা পরিবর্তন করে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।”[1]
তবে, অসীয়তকে উত্তম থেকে অতি উত্তমে পরিবর্তন করার ব্যাপারে মতপার্থক্য রয়েছে।
শাইখ ইবন উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: অতি উত্তমের জন্য ওসিয়তে পরিবর্তন সাধন করার ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। তাদের কেউ বলেছেন: এ জন্য অসীয়ত পরিবর্তন করা বৈধ নয়। কারণ, আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿فَمَنۢ بَدَّلَهُۥ بَعۡدَ مَا سَمِعَهُۥ﴾ ব্যাপক অর্থবোধক। গুনাহ ব্যতীত তাতে কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। আবার কেউ বলেছেন: বরং অতি উত্তমের জন্য অসীয়ত পরিবর্তন করা বৈধ। কারণ, অসীয়তের উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা ও অসীয়তকারীকে উপকার পৌঁছানো। তাই যেসব কাজ আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী এবং অসীয়তকারীর জন্য বেশি উপকারী তাই উত্তম। আর অসীয়তকারী যেহেতু মানুষ, তাই উত্তম জিনিসটি তার কাছে গোপনও থাকতে পারে। আবার এমনও হতে পারে, একই বস্তু এক সময় উত্তম, অন্য সময় অনুত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতি উত্তমের জন্য মান্নত পরিবর্তন করার অনুমতি প্রদান করেছেন, তবে যে কোনো অবস্থাতে তা পুরা করা অবশ্যই জরুরি…
এ মাসআলার প্রেক্ষিতে আমার অভিমত হচ্ছে: অসীয়ত যদি নির্দিষ্ট কারো জন্য হয়, তাহলে তাতে পরিবর্তন করা জায়েয নয়। যেমন কেউ জায়েদের জন্য অসীয়ত করেছে অথবা তার জন্য ওয়াকফ করেছে। এতে পরিবর্তন করা বৈধ নয়। কারণ, এখানে নির্দিষ্ট ব্যক্তির অধিকার জড়িত রয়েছে।
হ্যাঁ, যদি অনির্দিষ্ট কারো জন্য অসীয়ত করা হয়, যেমন মসজিদের জন্য, অথবা ফকিরদের জন্য, তার মধ্যে অতি উত্তমের জন্য পরিবর্তন করলে কোনো সমস্যা নেই।[2]
উপরোক্ত বর্ণনা মতে, মসজিদ ও অন্যান্য চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানগুলো আলাদা নির্মাণ করা যেমন বৈধ, অনুরূপভাবে একই ভবনে সবগুলো প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করাও বৈধ। আল্লাহ ভালো জানেন।
সমাপ্ত
সূত্র : موقع الإسلام سؤال وجواب
অনুবাদ: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা: প্রফেসর ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
[1] সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮১।
[2] তাফসীরুল কুরআন লিল উসাইমীন (৪/২৫৬)।