bn বাংলা
বাংলা বাংলা
English English
عربي عربي


+8801575-547999
সকাল ৯টা হতে রাত ১০টা
Community Welfare Initiative

কেউ শুধু মাংস খাওয়ার উদ্দেশ্যে কুরবানীতে শরীক হলে তার বিধান

প্রশ্ন:
১- একটি প্রাণীতে একাধিক ব্যক্তির অংশীদারিত্বে কুরবানী করা কি বৈধ?

২- যদি অংশগ্রহণকারীদের কেউ কেউ কুরবানীর নিয়ত না করে কেবল মাংস নেওয়ার উদ্দেশ্যে অংশ নেয়?

উত্তর:
আলহামদুলিল্লাহ। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর।
অতঃপর…

১- একটি উট বা গরুতে সাতজন পর্যন্ত অংশ নিতে পারে; তবে ছাগল বা ভেড়াতে একাধিক ব‍্যক্তির অংশীদার হওয়া বৈধ নয়।

২- আলেমদের মধ‍্যে যেসব মানুষ কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে চায় এবং যেসব মানুষ কেবল মাংস পেতে চায়- তাদের একত্রে কুরবানির অংশগ্রহণ সম্পর্কে দুটি মত রয়েছে।

প্রথম মত:

এটি বৈধ — কুরবানীতে একসাথে অংশ নেওয়া জায়েয, হোক তা ওয়াজিব বা নফল কুরবানী এবং অংশগ্রহণকারীদের সবাই যদি কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য চায় কিংবা তাদের কেউ কেউ কেবল মাংস চায়, তাতেও কোনো সমস্যা নেই। এ মতটি শাফেঈয়া ও হানাবিলাদের।
তারা দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছেন সহীহ মুসলিমে বর্ণিত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীস:

«خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُهِلِّينَ بِالْحَجِّ فَأَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نَشْتَرِكَ فِي الإِبِلِ وَالْبَقَرِ كُلُّ سَبْعَةٍ مِنَّا فِي بَدَنَةٍ»

“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হজের ইহরাম অবস্থায় বের হলাম। তখন তিনি আমাদেরকে উট ও গরুতে সাতজন করে অংশগ্রহণ করতে আদেশ দেন।”[১]

আরেক বর্ণনায় এসেছে:

«اشْتَرَكْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ كُلُّ سَبْعَةٍ فِي بَدَنَةٍ»

“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে হজ ও উমরায় অংশগ্রহণকালে প্রতি সাতজনে এক উট ভাগ করে নিই।”[২]

এই হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে হজে যেসব কুরবানী দেওয়া হয়, সেগুলোর কিছু ওয়াজিব হয় এবং কিছু নফল। অথচ উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও কুরবানীতে অংশগ্রহণ বৈধ হয়েছে, এর মানে হলো উদ্দেশ্যের পার্থক্য এতে প্রভাব ফেলে না।

ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “একটি উট বা গরুতে সাতজন অংশ নিতে পারে কুরবানীর জন্য, তা তারা একটি পরিবারভুক্ত হোক বা ভিন্ন ভিন্ন হোক, কিংবা তাদের কেউ কুরবানীর নিয়তে অংশ নিক আর কেউ শুধু মাংসের জন্য – এতে কুরবানীদানকারীর পক্ষ থেকে তা যথেষ্ট হবে। এটি আমাদের মাযহাব এবং ইমাম আহমদ রাহিমাহুল্লাহ ও অধিকাংশ আলেমের অভিমত।”[৩]

ইবন কুদামাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “একটি উট বা গরু সাতজনের পক্ষ থেকে কুরবানির জন্য যথেষ্ট। এটি অধিকাংশ আলেমের মত।…অংশগ্রহণকারীরা এক পরিবারের হোক বা না হোক, ফরয আদায় করছে বা নফল, অথবা কেউ ইবাদতের জন্য নিয়ত করেছে আর কেউ কেবল মাংসের জন্য— এতে কোনো অসুবিধা নেই। কারণ, প্রত্যেক ব্যক্তির পক্ষ থেকে শুধুমাত্র তার অংশটাই গণ্য হবে এবং অন্যের নিয়ত তার জন্য ক্ষতিকর হবে না।”[৪]

দ্বিতীয় মত:

যারা কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের ইচ্ছা রাখে তাদের সঙ্গে যাদের কেবল মাংস চাওয়ার ইচ্ছা — তাদের একসাথে কুরবানীতে অংশগ্রহণ বৈধ নয়। কারণ, কুরবানি একটি একক কাজ, তাই এটি আংশিক ইবাদত ও আংশিক নিছক মাংসের জন্য হতে পারে না। এই মতটি হানাফীদের।

সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মত:

এটাই যে, কেবল তাদের সাথেই কুরবানিতে অংশগ্রহণ বৈধ, যারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে করছে। কারণ শরীয়তের অনুমতি (ইজাজত) কেবল এই প্রকারের জন্য এসেছে।

তবে, উদ্দেশ্যে যদি কেউ নফল আর কেউ ওয়াজিব কুরবানী করতে চায়, তাহলে সেটি বৈধ হবে; কেননা উভয়েই ইবাদতের নিয়ত করে। কিন্তু কেউ যদি শুধুই মাংস পাওয়ার উদ্দেশ্যে অংশ নেয়, তাহলে সেটা ইবাদতের নিয়তের সঙ্গে মিশে না এবং এ ধরনের অংশগ্রহণ বৈধ নয়।

সূত্র: ইসলাম কিউ.এ
সম্পাদনা: প্রফেসর ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া


[১] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং (৩৫১) ১৩১৮।
[২] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং (৩৫৩) ১৩১৮।
[৩] আল-মাজমূ (৮/৩৭২)।
[৪] আল-মুগনী (১৩/৩৬৩)।
Share on