মীলাদুন্নবীতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির নিকট মেয়ে বিয়ে দেওয়ার বিধান
প্রশ্ন: আমার একটি কঠিন প্রশ্ন, আমার শালিকা ইদানিং বিয়ে করবে, কিন্তু সম্ভাব্য বরের প্রকৃতি সম্পর্কে সে শঙ্কিত। আমি স্পষ্ট করেই বলছি, সে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছে: মীলাদকে কঠিনভাবে সমর্থনকারী অথবা মীলাদুন্নবীর মাহফিল আয়োজনকারী ব্যক্তির সাথে বিয়ে কি বৈধ? আমি জানি যে, ইসলামে এ কাজটি বিদ‘আত। কিন্তু আমার সন্দেহ, মীলাদুন্নবী উদযাপনকারী ব্যক্তির সাথে একজন মুসলিম নারীর বিয়ে কীভাবে হতে পারে! কারণ, যেসব শহরে এ মীলাদ পালন করা হয়, তারা এটাকে ইবাদতের ন্যায়ই পালন করে। এখানে লোকদের আহ্বান করা হয়, কতক হাদীস পড়ে শোনানো হয়, গান-বাজনা হয় এবং প্রার্থনা করা হয়। লোকেরা মূলত দেখে ও গান গায়! আমার প্রশ্ন হচ্ছে এসব কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তির সাথে মুসলিম নারীর বিয়ে কি বৈধ? এর চেয়েও কঠিন প্রশ্ন (আমি যা প্রকাশ করতেও সঙ্কোচ বোধ করছি) এ বিদ‘আতী কি মুসলিম হিসেবে গণ্য হবে?
উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ
ঈদে মীলাদুন্নবী বা এ জাতীয় বিদ‘আতী কাজ যারা করে, তাদের আমল ও কর্মকাণ্ডের ভিন্নতার ন্যায় তাদের হুকুমও ভিন্ন, যদিও মীলাদুন্নবী বিদ‘আত। এ ধরণের মীলাদ আয়োজকদের পাপের ধরণ ও ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে এরা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। কখনো এদের বিষয়গুলো শির্ক পর্যন্ত পৌঁছে এবং তাদেরকে দীন থেকে বের করে দেয়, যদি এসব উৎসবে নির্দিষ্ট কোনো কুফুরী করা হয়, যেমন আল্লাহ ব্যতীত কারো নিকট প্রার্থনা করা অথবা আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের সিফাত দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিশেষিত করা অথবা এরূপ কোনো শির্কে লিপ্ত হওয়া। আর যদি বিষয়গুলো এ পর্যায়ে না পৌঁছে, তাহলে এরা ফাসেক, কাফের নয়। আবার এদের ফাসেকীর স্তর বিদ‘আত ও ইসলামি বিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে পৃথক ও আলাদা।
আর এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির অবস্থার ভিন্নতা হিসেবে তার হুকুমও ভিন্ন হবে। যদি কুফুরীতে লিপ্ত হয়, তাহলে কোনো অবস্থাতেই তার সাথে বিয়ে বৈধ হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تُنكِحُواْ ٱلۡمُشۡرِكِينَ حَتَّىٰ يُؤۡمِنُواْۚ وَلَعَبۡدٞ مُّؤۡمِنٌ خَيۡرٞ مِّن مُّشۡرِكٖ وَلَوۡ أَعۡجَبَكُمۡۗ﴾ [البقرة: ٢٢١]
“আর মুশরিক পুরুষদের সাথে বিয়ে দিয়ো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। আর একজন মুমিন দাস একজন মুশরিক পুরুষের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে।”[1] এমতাবস্থায় তার সাথে বিয়ের আকদও সম্পন্ন হবে না। এ ব্যাপারে আলেমগণ একমত।
আর যদি বিদ‘আতীর বিদ‘আত কুফুরী পর্যন্ত না পৌঁছে, তবুও আলেমগণ বিদ‘আতীদের সাথে বিবাহের সম্পর্ক কায়েম করা থেকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন।
ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: বিদ‘আতীদের নিকট মেয়ে বিয়ে দেওয়া যাবে না, আর না তাদের মেয়ে বিয়ে করা যাবে, তাদের ওপর সালামও দেওয়া যাবে না।[2] অনুরূপ কথা ইমাম আহমদ ইবন হাম্বলও বলেছেন।
প্রসিদ্ধ চার ইমাম বলেছেন, বিবাহের ক্ষেত্রে দীনি বিষয়ে কুফু তথা সমতা থাকা জরুরি। কোনো ফাসেক পুরুষ একজন সঠিক দীনদার নারীর কুফু ও সমান হতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَفَمَن كَانَ مُؤۡمِنٗا كَمَن كَانَ فَاسِقٗاۚ لَّا يَسۡتَوُۥنَ ١٨﴾ [السجدة: ١٨]
“যে ব্যক্তি মুমিন সে কি ফাসিক ব্যক্তির মতো? তারা সমান নয়।”[3]
এতে সন্দেহ নেই যে, দীনের মধ্যে বিদ‘আত কঠিন ফিসক। দীনের ব্যাপারে কুফু ও সমতার অর্থ: আকদ পরিপূর্ণ হওয়ার পর যদি নারীর নিকট অথবা তার অভিভাবকের নিকট প্রকাশ পায় যে, ছেলে ফাসিক, তাহলে তারা বিয়ে ভঙ্গের দাবি জানাতে পারবে। হ্যাঁ, তারা যদি দাবি ত্যাগ করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে, তাহলে বিয়ে শুদ্ধ।
তাই এ জাতীয় বিয়ে থেকে সতর্ক থাকাই শ্রেয়, বিশেষ করে কর্তৃত্ব যেহেতু পুরুষের হাতে, অনেক সময় সে স্ত্রীকে কোণঠাসা করে বিদ‘আতে লিপ্ত হতে বাধ্য করতে পারে অথবা কতক বিষয়ে সুন্নতের খেলাফ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে পারে। আর সন্তানদের বিষয়টি আরও ভয়ানক, খুব সম্ভব সে তাদেরকে বিদ‘আতের দীক্ষার ওপর অনুশীলন করাবে, ফলে আহলে সুন্নতের বিরোধী হয়ে তারা বেড়ে উঠবে। আর এতেই বিপত্তি সঠিক অনুসারীদের জন্য, যারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামা‘আতের অনুসরণ করে।
মোদ্দাকথা: কোনো মুসলিম পুরুষের মেয়েকে বিদ‘আতীদের নিকট বিয়ে দেওয়া মাকরুহে তাহরিমী। কারণ, এর ফলে অনেক ফ্যাসাদের জন্ম হয় এবং অনেক স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কোনো জিনিস ত্যাগ করে, আল্লাহ তাকে তার চেয়ে উত্তম জিনিস দান করেন। আল্লাহ ভালো জানেন।
সমাপ্ত
শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
অনুবাদ: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা: প্রফেসর ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
[1] সূরা আর-বাকারা: ২২১।
[2] আল-মুদাওয়ানাহ (১/৮৪)।
[3] সূরা আস-সাজদাহ: ১৮।