চাঁদ দেখার জন্য নব আবিষ্কৃত যন্ত্রের সহায়তা গ্রহণ করা
প্রশ্ন: মাসের শুরু ও শেষ জানার জন্য জ্যোতির্বিদ্যার উপর নির্ভর করা কি বৈধ? চাঁদ দেখার জন্য নতুন আবিষ্কৃত যন্ত্র ব্যবহার করা কি বৈ? না খালি চোখে চাঁদ দেখা জরুরি?
জবাব: আল-হামদুলিল্লাহ, মাসের প্রবেশ প্রমাণ করার জন্য শরী‘আত সম্মত পদ্ধতি হচ্ছে মানুষের চাঁদ দেখা। এটা এমন লোকদের পক্ষ থেকে হওয়া জরুরি, যাদের দীনদারী নির্ভরযোগ্য ও দৃষ্টিশক্তি ভালো-প্রখর। এরা যখন চাঁদ দেখবে, এদের দেখা অনুযায়ী আমল করা ওয়াজিব। যদি রমজানের চাঁদ হয় তবে সাওম পালন করা, আর যদি শাওয়ালের চাঁদ হয় তবে ঈদুল ফিতর পালন করা।
চাঁদ দেখা না গেলে শুধু জ্যোতির্বিদ্যার উপর নির্ভর করা বৈধ নয়। যদি চাঁদ দেখা যায়, তবে কক্ষপথের ওপর নির্ভর করা গ্রহণযোগ্য। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَصُومُوا وَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَأَفْطِرُوا».
‘‘যখন তোমরা চাঁদ দেখবে সাওম পালন করবে, আর যখন চাঁদ দেখবে তখন (সাওম) ভঙ্গ করবে।’’[1]
শুধু গণনার ওপর আমল করা কিংবা নির্ভর করা বৈধ নয়।
চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে অনুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করা অবৈধ নয়, তবে তা ওয়াজিবও নয়। কারণ, হাদীসের স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে স্বাভাবিক দেখার ওপর নির্ভর করা, অন্য কিছুর ওপর নয়। যদি নির্ভরযোগ্য কোনো ব্যক্তি তা ব্যবহার করে এবং তার মাধ্যমে চাঁদ দেখে, তবে তার দেখার ওপর আমল করা বৈধ। আদি যুগে মানুষ রমাদ্বান ও শাবানের ত্রিশ তারিখে মিনারায় উঠে যন্ত্র ব্যবহার করে চাঁদ দেখত।
সারকথা, যেভাবেই হোক যখন চাঁদ দেখা প্রমাণ হতে হবে, তখন সে অনুযায়ী আমল করা ওয়াজিব। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَصُومُوا وَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَأَفْطِرُوا».
‘‘যখন তোমরা চাঁদ দেখবে সাওম পালন করবে, আর যখন চাঁদ দেখবে তখন (সাওম) ভঙ্গ করবে।’’[2]
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন
ফতোয়া উলামাউ বালাদিল হারাম, পৃষ্ঠা. ১৯২-১৯৩
‘ফতোয়া লাজনায়ে দায়েমা’র (১২৪৫) নং প্রশ্নের উত্তরে রয়েছে: “চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে অনুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করা বৈধ। তবে রমাদ্বান শুরু ও শেষের জন্য জ্যোতির্বিদ্যার ওপর নির্ভর করা বৈধ নয়।”[3]
এরই মাধ্যমে প্রমাণ হলো, যারা বলে, আমাদের আলেমগণ নব আবিষ্কৃত অনুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করাকে হারাম বলে ফাতওয়া দিয়েছেন এবং খালি চোখে দেখাকে ওয়াজিব বলেছেন। তাদের কথা সঠিক নয়। (আল্লাহ ভালো জানেন)
মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, হে আল্লাহ আমাদের হককে হক করে দেখাও ও তার অনুসরণ করার তাওফীক দান কর। আর বাতিলকে বাতিল করে দেখাও এবং তা থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান কর। বাতিল যেন আমাদের নিকট অস্পষ্ট না হয়, তাহলে আমরা বিভ্রান্ত হয়ে যাব। হে আল্লাহ আমাদেরকে মুত্তাকিদের ইমাম বানিয়ে দিন।
সমাপ্ত
সূত্র: موقع الإسلام سؤال وجواب
মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
অনুবাদ: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা: প্রফেসর ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৫৬।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৫৬।
[3] দেখুন: ফতোয়া লাজনায়ে দায়েমা (৯/৯৯)।